ভরা পদ্মায় ভেসে চলেছে হাজার হাজার ‘কলার ভেলা’, বিএসএফের নজর পড়ে না!

জব্বর চারপাশ তাকিয়ে নিয়ে বলেন, ‘‘কিস্যুই বোজ়েন না দ্যাখত্যাসি। পাচারের গরু ভাসাইতে হবে না, দাম দিয়েই তো কিনসে পাচারকারীরা, কলার ভেলাই যে ভরসা!’’

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

রানিনগর  শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০১:২১
Share:

এভাবেই কলার ভেলার সঙ্গে বেঁধে পাচার হয় গরু। —ফাইল চিত্র

ফাঁকা রাস্তায় সাইকেলের দু’ধারে সদ্য কাটা দু’টো কলা গাছ বেঁধে ছেলেটি প্রাণপনে সাইকেল টানছে। পাশের ছেলেটির সাইকেলেও একই ভাবে বাঁধা আরও দু’টি কলা গাছ। বয়স সাকুল্যে বারো-চোদ্দ, ছেলে দু’টি হাঁফাচ্ছে।

Advertisement

—কলা গাছ নিয়ে কোথায় চললি রে? ছেলে দু’টি সাইকেলের স্পিড বাড়িয়ে দেয়।

সীমান্তের রানিনগর, ইসলামপুর, জলঙ্গি—এমন কলাগাছের কদর বেড়েছে। গ্রামের ঘর-বাড়ির আনাচকানাচে কলা গাছ লাগানো রীতিমতো চালু রেওয়াজ। সীমান্তের জব্বর আলি বলছেন, ‘‘গাছ পিছু তিন থেকে সাড়ে তিনশো টাকা দাম। এ সময়ে খুব কদর কলা গাসের।’’ কেন? জব্বর চারপাশ তাকিয়ে নিয়ে বলেন, ‘‘কিস্যুই বোজ়েন না দ্যাখত্যাসি। পাচারের গরু ভাসাইতে হবে না, দাম দিয়েই তো কিনসে পাচারকারীরা, কলার ভেলাই যে ভরসা!’’

Advertisement

বছর তিনেক ধরে কলার ভেলা তাই মহার্ঘ হয়েছে সীমান্তে। পদ্মায় জল বাড়তে শুরু করলেই পাচারের রমরমা শুরু হয় আর তাকে ভাসিয়ে ও পাড়ে পাঠাতে কলা গাছের উপকারিতা ভোলা যায় কি করে! গত বছর যেখানে এক একটা কলাগাছ ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিকিয়েছে এ বার তার দাম তিনশো। গোটা কয়েক কলাগাছ জুড়ে তৈরি হচ্ছে ভেলা, আর তাতেই বেঁধে দেওয়া হচ্ছে ভেলা। গরু পদ্মা-ভাসি হয়ে উঠছে সটান বাংলাদেশের পাড়ে।

সীমান্তের এক পাচারকারী বলছেন, ‘‘কলাগাছ বাঁশের কঞ্চিতে গেথে তার মাঝে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে গোটাকয়েক গরু। লতা পাতা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সেই কলার ভেলার উপরে, ফলে বাইরে থেকে কেউ টেরই পাচ্ছে না। আপাতভাবে মনে হবে, নদীতে ভেসে চলেছে কলার ভেলা, কিন্তু আদতে ওই ভেলার আড়ালে ভেসে চলেছে হাজার হাজার

গবাদি পশু।’’ ইদের মরসুমে বাংলাদেশ গবাদি পশুর দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। সীমান্তের বাসিন্দাদের দাবি, এর পিছনে বিএসএফ ও পুলিশের একাংশের প্রচ্ছন্ন মদতও রয়েছে।

বিএসএফের এক কর্তা বলছেন, ‘‘গভীর রাতে শতাধিক ভেলা একসঙ্গে ভাসিয়ে দিচ্ছে পাচারকারীরা। আর ভরা পদ্মায় এই শতাধিক ভেলাকে একসঙ্গে ধরার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। ফলে চেষ্টা থাকলেও সব ভেলা আটকানো যাচ্ছে না।’’

শুধু কলার ভেলা নয়, পাচারের ভরা মরসুমে গাছা পাটের (জমিতে থাকা পাট) দামও চড়ছে চড়চড় করে। আর আঁটি হিসেবে পাট কিনে সেই পাটের জাগ এর আড়ালে গুঁজে দেওয়া হচ্ছে গবাদি পশু। কৌশলটা এমন বিএসএফের যেন মনে হয় ভেসে যাচ্ছে পাটের জাগ।

রানিনগর সীমান্তের এক চাষি জানান, সীমান্তের মাঠে পাট চাষ করে সেই পাট ঘরে তুলে খুব বেশি লাভ হয় না, ফলে পাচারকারীদের কাছে গাছা পাট বিক্রি করে দিলে এক দিকে যেমন কাঁচা টাকা হাতে আসছে, তেমনই পরিশ্রমও কমছে তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন