ভক্তের সন্নিধানে। নিজস্ব চিত্র
চাকদহে জগন্নাথের স্নানযাত্রার সুদীর্ঘ ইতিহাসে অনেকদিন ধরেই ঢুকে রয়েছে লোকআবেগ। সদ্য স্নানযাত্রা পেরিয়েও আসা এলাকার মানুষের মধ্যে এখনও উৎসাহে কমতি নেই। প্রতিবারের মতো এবারেও মেলা বসেছে এখানে। মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। চাকদহ বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা তানিয়া বিশ্বাস বলেন, “এই জায়গার মহত্ব বলে শেষ করা যায় না!” মহত্ব আদৌ আছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কারও কারও মতে, যেসব গল্প শোনা যায়, তা নিছকই গল্প। তেমনই এক লোকশ্রুতি, কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একদিন খবর পান, জগন্নাথের মূর্তি তাঁর রাজ্যে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু তা নাকি এত ভারী হয়ে যায়, যে সরানো সম্ভব হয় না। শেষমেষ চাকদহেই জগন্নাথের জন্য পাঁচশ বিঘা জমি দান করেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র।
মন্দিরের সেবায়েত বলরাম দাস ব্রহ্মচারী বলেন, “শোনা যায়, এখানে বকুল গাছে আম, অশ্বথগাছে কাঁঠাল এবং কুয়োয় দুধ হয়েছে! এসব দিয়ে পণ্ডিত জগন্নাথের পুজো করেছেন!” তিনি আরও বলেন, “মন্দিরে জগন্নাথদেব এবং গৌর গোপালের নিত্যপুজো হয়। প্রতিবছর এখানে দু’টো করে অনুষ্ঠান হয়। জগন্নাথের স্নানযাত্রা এবং পৌষমাসের শুক্ল তৃতীয় তিথিতে জগদীশ পণ্ডিতের তিরোধান দিবস। জগন্নাথের ইচ্ছা ছিল না! তাই এখানে রথ হয় না।”
এই এলাকায় মূর্তিটি ঠিক কীভাবে এল, তা নিয়ে সুস্পষ্ট ইতিহাসের চেয়ে বেশি ছড়িয়ে রয়েছে লৌকিক গাঁথা। সেসময় গৌহাটির বাসিন্দা জগদীশ পণ্ডিত নবদ্বীপে বসবাস শুরু করেছেন। পণ্ডিত নীলাচলে হরিনাম সংকীর্তন প্রচারে যান। সেখানে জগন্নাথ-দর্শন করে আপ্লুত হয়ে পড়েন। ফেরার সময়ে জগন্নাথের ইচ্ছায়, তাঁর সমাধিস্থ বিগ্রহ পণ্ডিতের সঙ্গে আসে। লোককথা, বয়ে আনার সুবিধার জন্য জগন্নাথ নিজেই নাকি ভারী বিগ্রহ থেকে শোলার মতো হালকা হয়ে যান। একটাই শর্ত, তাঁকে মাটিতে নামানো চলবে না। নবদ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করা পণ্ডিত মাঝপথে, যশড়ার কাছে অন্য এক ব্যক্তির কাছে ঝোলাটি দিয়ে নদীতে স্নানে নামেন। স্নান ও তর্পন সেরে ফিরে দেখেন, ওই ব্যক্তি জগন্নাথের মূর্তি মাটিতে নামিয়ে ফেলেছেন। আর মূর্তিও আবার আগের মতো ভারী!
প্রতিবছর রথ আসে, যায়। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের গণ্ডি মুছে, স্নানযাত্রার উৎসবে মেতে থাকেন চাকদহের মানুষ।