হকের ‘মাল’ না পেয়েই ফিরতে হচ্ছে

সকাল ৭টা। কয়েক জন কর্মী সবে ঝাঁপ তুলছেন। দোকান তখনও প্রায় ফাঁকা। ধানতলা থানা এলাকার পূর্ব ন’পাড়ার এক রেশনের দোকান। মালিকের নাম সৃষ্টিধর ঘোষ ওরফে কালা।

Advertisement

মনিরুল শেখ

ধানতলা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:০০
Share:

রেশনের দোকানে গ্রাহকেরা। ধানতলার পূর্ব ন’পাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

সকাল ৭টা। কয়েক জন কর্মী সবে ঝাঁপ তুলছেন। দোকান তখনও প্রায় ফাঁকা। ধানতলা থানা এলাকার পূর্ব ন’পাড়ার এক রেশনের দোকান। মালিকের নাম সৃষ্টিধর ঘোষ ওরফে কালা।

Advertisement

রবিবার সকাল, সবে পুজো গিয়েছে, এমন দিনে রেশন দোকানে ভিড় উপচে পড়ারই কথা।

সাড়ে ৭টা নাগাদ দোকানে ঢোকে গ্রামেরই বাসিন্দা বছর পনেরোর রাকেশ রায়। তার কাছে চারটি ‘প্রায়োরিটি হাউস হোল্ড ক্যাটাগরি’র কার্ড ছিল। নিয়ম মতো প্রতি মাসে কার্ড প্রতি ৬০০ গ্রাম করে কেরোসিন তেল দেওয়ার কথা। অর্থাৎ রাকেশের পাওয়ার কথা ২৪০০ গ্রাম তেল। কিন্তু কালার দোকানে সে সব নিয়ম রয়েছে নেহাতই খাতায় কলমে। বাস্তবে রাকেশ পেল অর্ধেক তেল। তাকে কেন কম দেওয়া হল, তা জিজ্ঞাসা করতে দোকানেরই এক কর্মী জানালেন, ওকে আগের সপ্তাহে তেল দেওয়া হয়েছে। তাই এ বার কম দেওয়া হল।

Advertisement

এ কথা শুনে আশপাশের লোকজন জানালেন, এ মাসে এই প্রথম বার কেরোসিন তেল দেওয়া হচ্ছে। আগের সপ্তাহে কেরোসিন দেওয়া হয়নি। পাশে দাঁড়িয়ে কালাও কাঁচুমাচু মুখে সে কথা স্বীকার করে নিলেন। ‘‘তা হলে কেন আপনি তেল কম দিলেন?’’ এই প্রশ্নের অবশ্য কোনও যুতসই জবাব দিতে পারলেন না কালা।

ওই রেশনের দোকানে কম ‘মাল’ দেওয়ার অভিযোগ উঠছিল অনেক দিন ধরেই। স্থানীয়দের দাবি, গ্রাহকেরা এ নিয়ে আপত্তি করলেও কানে তোলেননি রেশনের দোকানের মালিক। খবর পেয়েই সেখানে হঠাৎ যাওয়া। গিয়ে দেখা গেল, ওই দোকানে পরিমাণে কম তো দেওয়া হচ্ছেই, বালাই নেই ক্যাশমেমোরও। তবে খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা হিসাব পান কী করে? দোকানের মালিক কালা সে দিকে ফাঁক রাখেন না। গ্রাহককে কম মাল দিলেও খামতি পুষিয়ে দেন নিজের কাছে রাখা হিসাবের খাতায়। সেখানে সামগ্রীর পরিমাণ বাড়িয়ে লেখার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘কী আর করব। অনেক ডিলারই করেন। তাই আমিও করি।’’

রাকেশের পরে গুটি গুটি পায়ে হাজির হলেন আর এক গ্রাহক অনুপ বিশ্বাস। তাঁর হাতে ছিল তিনটি কার্ড। হিসাব মতো তাঁর পাওয়ার কথা ১৮০০ গ্রাম কেরোসিন তেল। কিন্তু তাঁকে দেওয়া হল ১১০০ গ্রাম। এরই মধ্যে অন্য ক্রেতারা বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতিবাদ করতে শুরু করেন।

শ্যামাপদ ঘোষ নামে আর এক গ্রাহককে দোকান থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। দোকানের কর্মীদের দাবি, তাঁর কাছে তেল নিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত পাত্র নেই। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এবং শ্যামাপদ এক লিটারের বোতল বার করতে অবশ্য কোরেসিন দিতে বাধ্য হলেন তাঁরা। জিনিস নিয়ে ফেরার সময় শ্যামাপদর মন্তব্য, ‘‘আজ সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির সামনে ঝামেলা করলাম বলে সঠিক সামগ্রী দিল। পরের সপ্তাহ থেকে আবার কম দেবে। কখনওই সঠিক সামগ্রী দেওয়া হয় না। আর যাঁরা সামগ্রী নিচ্ছেন, তাঁদের কাউকেই ক্যাশমেমো দেওয়া হচ্ছে না।’’

কেন ক্যাশমেমো দেওয়া হচ্ছে না? সেই প্রশ্নের উত্তরে কালা বলেন, ‘‘ভিড় সামলে ক্যাশমেমো দেওয়ার সময় থাকে না।’’ ‘‘কিন্তু এখন তো ভিড় কম, তা হলে কেন দিচ্ছেন না?’’ এর কোনও জবাব ছিল না কালার কাছে। কয়েক জন গ্রাহক ক্যাশমেমো নিয়ে প্রশ্ন করলে কালার সাফ কথা, ‘‘মাল তো পাচ্ছেন, আর কী চাই?’’

ঘণ্টা দুয়েক কেটে গিয়েছে। যা দেখার ছিল, দেখা হয়ে গিয়েছে। তখন রেশন দোকানের সামনে লম্বা লাইন। যাঁদের অনেকেই হকের ‘মাল’ না পেয়ে ব্যাজার মুখে ফিরে যাচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন