রবিবার রাতে ফরাক্কা ব্যারাজের ৪৯ নম্বর লকগেটটি ভেঙে যায়। সেই বিষয়ে আলোচনার জন্য বুধবার ফরাক্কায় যান রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। রাজীববাবুর অভিযোগ, গত সাড়ে তিন বছরে একাধিক বার ব্যারাজ কর্তৃপক্ষকে গেট বদলানোর কথা বলা হলেও তাঁরা তা কানে তোলেননি। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
ফরাক্কা ব্যারেজের ৪৯ নম্বর লকগেট ভেঙে পড়ে গেল রবিবার। ঘটনার পরপরই রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি কেন্দ্রীয় জল সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী উমা ভারতীকে জানান। তারপর দ্রুত শুরু হয়েছে সেই গেট সারনোর কাজ। বুধবার রাজীববাবু ও রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনীশ গুপ্ত ফরাক্কায় আসেন। তাঁরা ব্যারেজের জেনালের ম্যানেজার সহ অন্যান্য পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পদস্থ কর্তারাও ছিলেন। ছিলেন জেলা শাসক ও সেচ দফতরের পদস্থ কর্তারাও।
বৈঠক শেষে বেড়িয়ে দুই মন্ত্রীই গেট ভাঙা নিয়ে জেনারেল ম্যানেজার সৌমিত্রকুমার হালদারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। ব্যারাজের কাজকর্ম দেখে জেএমকে রাজীববাবু বলেন, “গেট ভাঙছে অথচ সরকারকে জানাচ্ছেন না। ২০১২ সালে গেটগুলির বিপজ্জনক দশা নিয়ে রাজ্য ব্যারাজকে সতর্ক করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছিল। অথচ সাড়ে তিন বছরে ১০৯টি গেটের মধ্যে মাত্র ২১টি গেট সারানো হয়েছে।”
মনীশ গুপ্ত বলেন, ‘২০১১ সালের দুটি গেট ভাঙে। ফিডার ক্যানেলের জলস্তর ৪০ হাজার কিউসেক থেকে নেমে ২০ হাজার কিউসেকে দাঁড়ায়। মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে ফরাক্কায় বৈঠক হয় রাজ্যের মন্ত্রী ও অফিসারদের। ব্যারাজের কর্তারাও সেখানে ছিলেন। ঠিক হয়, কেন্দ্রীয় জল কমিশনের একটি কমিটি গেটগুলির অবস্থা দেখে রিপোর্ট দেবে কেন্দ্রকে। ২০১২ সালের জুন মাসে রিপোর্ট জমা পড়লেও তা রাজ্যকে জানানো হয়নি। ১০৯টি গেটের মধ্যে সাড়ে তিন বছরে টেন্ডার হয়েছে ৩৩টি গেট বদলানোর। কিন্তু বদলানো হয়েছে ২১টি। তিনটিতে কাজ চলছে। যা অবস্থা তাতে আরও গেট ভাঙার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীকে ফরাক্কা ব্যারাজের এই ভূমিকার কথা জানিয়ে রিপোর্ট দেব। চিঠি দেব কেন্দ্রীয় সরকারকেও।”
ফরাক্কা ব্যারাজের বিরুদ্ধে আরও সুর চড়িয়েছেন রাজ্যের সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে ঝাড়খন্ডে বৃষ্টির কারণে গঙ্গায় জলস্তর রয়েছে ৭২ ফুট। ফিডার ক্যানাল দিয়ে কলকাতা বন্দরে জল যাওয়ার পরিমাণ বুধবার ছিল ৪৩১৯৮ কিউসেক। মূল গঙ্গায় বইছে ৪৪১৭৮ কিউসেক জল। ফলে এখনও পর্যন্ত জল নিয়ে সমস্যা হয়নি। কিন্তু আশঙ্কা, ভাঙা গেট দ্রুত সারানো না গেলে জলে টান পড়বে ভাগীরথীতে। সে ক্ষেত্রে ২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সঙ্কটে পড়বে। বার্জ চলাচল বন্ধ হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা আসবে না। ২০১২ সালে মূল গঙ্গায় জলস্তর নেমেছিল ৬৫ ফুট। ফলে ফিডার ক্যানেলে জলপ্রবাহ কমে দাঁড়ায় ২০ হাজার কিউসেকে। এই আশঙ্কার কথা ব্যারাজকে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। ১০৯টি গেটের চারদিকের লিকেজ দিয়ে দৈনিক ২০ হাজার কিউসেক বাড়তি জল চলে যাচ্ছে বাংলাদেশে।
ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ বলেছিল কর্মী নেই। রাজ্য তিন জন ইঞ্জিনিয়ার দিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের কাজে লাগানো হয়নি। ৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় জল সম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতীর সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আপ ও ডাউন স্ট্রিমে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ভাঙন রোধের কাজ শুরু করবে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। দেড় মাস কেটে গেলেও সে কাজের কোনও টেন্ডার ডাকা হয়নি।” সৌমিত্রবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘মন্ত্রীরা যা বলেছেন তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। গেট মেরামতির কাজ নিয়ম মেনেই হচ্ছে।