রেফার টু নার্সিংহোম

ম-এ মুম্বই, চ-এ চেন্নাই

সরকারি হাসপাতালের প্রতি অনাস্থা এ রাজ্যের আমজনতার মনের গভীরে প্রোথিত। নার্সিংহোমে যেতে পারলেই যেন তাঁরা বাঁচেন। কারও কারও আবার অবিশ্বাস এতই প্রবল যে রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল নিয়েও তাঁরা সন্দিহান।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৭ ০০:২৭
Share:

সরকারি হাসপাতালের প্রতি অনাস্থা এ রাজ্যের আমজনতার মনের গভীরে প্রোথিত। নার্সিংহোমে যেতে পারলেই যেন তাঁরা বাঁচেন। কারও কারও আবার অবিশ্বাস এতই প্রবল যে রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল নিয়েও তাঁরা সন্দিহান।

Advertisement

জেলা তো নয়ই, কলকাতার বড় ক্লিনিক, হাসপাতাল, নার্সিংহোমেও তাঁদের ভরসা নেই। তাঁরা দৌড়োচ্ছেন ভিন্ রাজ্যে। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো ভাল ডাক্তার বা পরিকাঠামোর অভাব দায়ী। রয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতাও।

জেনে নেওয়া যাক এমনই কয়েক জনের আখ্যান:

Advertisement

মহীতোষ বিশ্বাস, কৃষ্ণনগর

আমার ভাইয়ের অসুখের ক্ষেত্রেই দেখেছিলাম, কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলো কী ভাবে ডাকাতি করে। তাই নিজে যখন অসুস্থ হলাম, কোনও ঝুঁকি না নিয়ে এক আত্মীয়কে সঙ্গী করে মুম্বই পাড়ি দিই। ওখানে কেউ চিকিৎসার নামে ডাকাতি করে না। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই খরচ।

পিন্টু বিশ্বাস, বহরমপুর

পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতাল আর নার্সিংহোমের ডাক্তারদের দেখিয়ে কোনও লাভ হয়নি। গ্যাস-অম্বল আর ব্যথা কমানোর ওষুধ দেয়
আর মোটা টাকা ভিজিট নেয়। ডাক্তারদের পরামর্শে আলট্রাসোনোগ্রাফি থেকে ইউরিন টেস্ট, সব হয়ে গিয়েছে। রোগ ধরা পড়েনি। শেষে বেঙ্গালুরু মণিপাল হাসপাতালে গিয়ে ধরা পড়ল কিডনিতে চারটে পাথর রয়েছে। ওষুধ খেয়ে এখন ভাল আছি।

সুপ্রতিম নাগ, হরিণঘাটা

পেটের রোগে দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট পাচ্ছিলাম। যন্ত্রণা বাড়লে ভর্তি হতেন স্থানীয় নার্সিংহোমে। গোটা কয়েক ইঞ্জেকশন-ওষুধে ব্যথা কমলে বাড়ি ফিরতাম। বছর দুয়েক আগে ভর্তি হই কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে। বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ হল। কিন্তু রোগ ধরা পড়ল না। শেষে ভেলোরে যাই। ছিলাম কুড়ি দিন। হাজার পঞ্চাশেক খরচ হয়েছিল। সেরে গিয়েছি।

অনির্বাণ মজুমদার, বেলডাঙা

আমার দাদার সর্দি হত প্রায়ই। কাশি হত অনর্গল। এন্ডোস্কোপি করা সত্ত্বেও রোগ বোঝা যায়নি ঠিকঠাক। শেষ পর্যন্ত একটি নার্সিংহোম জানায়, নাকের হাড় বাঁকা। অস্ত্রোপচার করতে খরচ ৭৫ হাজার টাকা। শুনে, দাদাকে নিয়ে চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তার জানান, অ্যালার্জি থেকেই সমস্যা। নাকের ড্রপ আর সামান্য ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেন।

সুজেনারা বিবি, ডোমকল

কুপিলা থেকে কলকাতা যাওয়াই কষ্টের। বড় জোর বহরমপুর অবধি দৌড়। জরায়ুতে টিউমার। বহরমপুরের বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরা মাইক্রো সার্জারি করতে গিয়ে মূত্রনালি কেটে দেন। কলকাতায় এক বেসরকারি হাসপাতাল জানায়, ১২ লক্ষ টাকা খরচ হবে। তত দিনে এক বিঘা জমি বিক্রি করে ফেলেছি। শেষে বেঙ্গালুরু যাই। ইতিমধ্যে দু’বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। খরচ হয়েছে চার লক্ষ টাকা।

এঁরা কেউই কোনও পরিচিতকে রাজ্যে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন না। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন