ভোটের কড়াকড়ি, মেলায় এলেন না ওপারের ভক্তেরা

ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। জেলাকে শান্ত রাখতে নানা পদক্ষেপ করেছে জেলা প্রশাসন। সীমান্ত জেলা মুর্শিদাবাদে সেই কড়াকড়ি যেন একটু বেশি। দুষ্কৃতীদের আনাগোনা রুখতে কড়া নজর রয়েছে কাঁটাতারের উপর। আর সেই নজরদারিতে আটকে গেলেন পুণ্যার্থীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সুতি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫৩
Share:

জমে উঠেছে মেলা। নুরপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। জেলাকে শান্ত রাখতে নানা পদক্ষেপ করেছে জেলা প্রশাসন। সীমান্ত জেলা মুর্শিদাবাদে সেই কড়াকড়ি যেন একটু বেশি। দুষ্কৃতীদের আনাগোনা রুখতে কড়া নজর রয়েছে কাঁটাতারের উপর। আর সেই নজরদারিতে আটকে গেলেন পুণ্যার্থীরা। এ বছর নুরপুরের মেলায় যোগ দেওয়া হল না কাঁটাতারের ওপারের বাসিন্দাদের।

Advertisement

গত মঙ্গলবার সীমান্ত-ঘেঁসা গ্রাম নুরপুরে শুরু হয়েছে কালীপুজো। মন্দিরকে ঘিরে বসেছে বিরাট মেলা। অদূরে রঘুনাথগঞ্জের নিস্তা গ্রামেও শুরু কালীপুজো। প্রতি বছর সেই মেলা দেখতে ভিড় জমান জেলার নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষজন। বাদ যাদ না কাঁটাতারের ওপারে বাংলাদেশের শিবগঞ্জ, ফুটাপাড়া, নারায়ণপুর প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দারাও। কালীপুজোর জন্য নুরপুরে আসার জন্য এক রাতের ছাড়ের অলিখিত রেওয়াজ বহুদিনের। কিন্তু এ বারে বাধ সেধেছে নির্বাচনের নজরদারি। তাই এ বছর মেলায় আসা হল না তাঁদের।

সীমান্ত লাগোয়া পদ্মাপাড়ের গ্রাম রমাকান্তপুরে এই কালীপুজো শুরু করেন মেদিনীপুরের এক জমিদারের নায়েব ভবকালী দত্ত। কুঁড়েঘরে মন্দির গড়ে তিনি পুজো শুরু করেন। সেই থেকে প্রতি বছর চৈত্র মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার নুরপুর ও নিস্তায় কালীপুজো হয়। জনা ষাটেক গ্রামবাসীকে নিয়ে গড়া হয় কমিটি। মেলার আয়োজক কমিটির কর্তা ষাটোর্ধ্ব সুধাংশুশেখর দাস জানান, মেলা বহু পুরনো। পুজোর জন্য বিঘে ছয়েক জমিও রয়েছে। কুঁড়ে ঘর এখন আর নেই। তার জায়গায় সুদৃশ্য মন্দির। মন্দিরকে ঘিরে মেলা বসে। দিন যত গিয়েছে মেলার পরিধি বেড়েছে। এখন প্রায় ১০০ বিঘে জুড়ে বিশাল আমের বাগানে মেলা বসে। তিনি জানান, সারা বছরই মন্দিরে প্রতিমা থাকে। পুজোর দিন দুপুরে পুরোনো মূর্তি বিসর্জন দিয়ে পাটে তোলা হয় নতুন মৃন্ময়ী। এটাই প্রথা।

Advertisement

সুধাংশুবাবু বলেন, “প্রতি বছরই পুজোয় বাংলাদেশি ভক্তেরা আসেন। কেউ মানত করেন। এখন নির্বাচনের সময়। কড়াকড়ি বেড়েছে। তাই এ বছর আসতে পারেননি ওপারের ভক্তেরা।’’

মেলায় মেলে সবই। গৃহস্থালির টুকিটাকি থেকে আসবাবপত্র। পাশের গ্রামেই বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ আশিস তিওয়ারির। রাতে জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে ঘুরে গিয়েছেন মেলা। তিনি বলেন, “গ্রামবাসীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নুরপুরের মেলায় নানা জিনিসের আমদানি হয়। আত্মীয়দের আনাগোনায় ভরে ওঠে গ্রামগুলি।”

নিস্তা গ্রামের কুপকালী পুজোও হয়েছে মঙ্গলবার রাতে। কুপকালীর প্রতিষ্ঠা নিয়ে দু’রকম মত চালু রয়েছে।

এক মতে, দেড়শো বছর আগে আজিমগঞ্জ-জঙ্গিপুর রেললাইন পাতার কাজ চলছিল। সেই সময় শ্রমিকেরা চৈত্র মাসে এই কালী পুজোর চালু করেন। ভিন্ন মত হল, খেলাচ্ছলে কয়েকজন বালক কূপ অর্থাৎ ডোবা থেকে মাটি তুলে বানিয়েছিল একটি কালীমূর্তি। রাতে সেই মূর্তির পুজো সেরে বিসর্জন করে দেয় সেই কূপেই। সেই থেকেই কূপকালী হিসেবে পরিচিত এই পুজো।

তবে মেলায় বড় সমস্যা হল জলকষ্ট। লালগোলার পাহাড়পুরের বাসিন্দা মুলিরাম মণ্ডল আগেও মেলায় এসেছেন। তাঁর কথায়, “এত লোকের সমাগম হয়। কিন্তু না আছে পানীয় জলের ব্যবস্থা, না শৌচাগার। ফলে সমস্যায় পড়েন পুণ্যার্থীরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন