ভাঙন রোধে ভরসা নদীপাড়ে ভেটিবার

ভাঙন বিধ্বস্ত নদীপাড় পাথর দিয়ে বাঁধানো হয়। কিন্তু, বর্যার ভরা গঙ্গা তাও গিলে ফেলে বার বার। শেষ পর্যন্ত মুসকিল আসান করেছে সামান্য ঘাসই। ভাঙন রুখে দিচ্ছে তারাই। নদিয়া জেলায় ভাগীরথী-সহ বিভিন্ন নদীর ১৩৪ কিমি পাড় বাঁধানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৭
Share:

গঙ্গার পাড়ে ভেটিবার। — নিজস্ব চিত্র

ভাঙন বিধ্বস্ত নদীপাড় পাথর দিয়ে বাঁধানো হয়। কিন্তু, বর্যার ভরা গঙ্গা তাও গিলে ফেলে বার বার। শেষ পর্যন্ত মুসকিল আসান করেছে সামান্য ঘাসই। ভাঙন রুখে দিচ্ছে তারাই। নদিয়া জেলায় ভাগীরথী-সহ বিভিন্ন নদীর ১৩৪ কিমি পাড়া বাঁধানো হয়েছে।

Advertisement

জেলার এমন প্রয়াসকেই সম্মান জানাল রাজ্য সরকার। শুক্রবার কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে নদিয়া জেলা প্রশাসনের কর্তাদের হাতে ১৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার মূল্যের চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু বাঁধ বাঁধানোই নয়, ভেটিবার দিয়ে হস্তশিল্প সামগ্রীও বানিয়ে মহিলাদের গোষ্ঠীকে স্বনির্ভর করার বিষয়টিও পুরস্কারে গুরুত্ব পেয়েছে।

এ দিন নেতাজি ইন্ডোরে হাজির ছিলেন জেলা শাসক সুমিত গুপ্তা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায়, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের জেলা আধিকারিক বাবুলাল মাহাত। শুধু ভেটিবার প্রকল্পই নয়, পুরস্কার পেয়েছে চাকদহ ব্লকের তিনটি প্রকল্প।

Advertisement

নদিয়া জেলার ওপর দিয়ে ভাগীরথী, জলঙ্গি, ইছামতি, মাথাভাঙ্গা, চূর্ণী এবং পদ্মা নদী গিয়েছে। জেলায় এই নদীগুলির বিস্তার প্রায় ৭৪৩ কিলোমিটার। ফি বর্ষায় নদীপাড়ের ভাঙন জেলার অন্যতম সমস্যা। বিভিন্ন সময় নদীর পাড় পাথর দিয়ে বাঁধানো হয়েছে। কিন্তু, তার পরেও রোখা যায়নি ভাঙন।

তার পরেই নদীপাড়ের মাটির ক্ষয় রুখতে ভেটিবার লাগানোর উদ্যোগ নেয় নদিয়া জেলা। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে তেহট্টে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ‘সবুজায়ন’ নাম দিয়ে ভেটিবার প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

সে বছর ডিসেম্বর মাসে তামিলনাড়ু থেকে ১২লক্ষ ভেটিবার চারা এনে নার্সারি তৈরি করা হয়। জেলার বিভিন্ন ব্লকে ৫২টি নার্সারি তৈরি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’বছরে জেলায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভেটিবার চারা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার ১৩৪ কিলোমিটার নদীপাড়ে ভেটিবার লাগানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, শুধু নদিয়াই নয়, রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও এখানকার নার্সারি থেকে ভেটিবার পাঠানো হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ৬০ হাজার, দক্ষিন ২৪ পরগনায় ৫০ হাজার, পুরুলিয়ায় ১০ হাজার ভেটিবার চারা পাঠানো হয়েছে।

চাকদহ, নাকাশিপাড়া-সহ জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে ভেটিবারের উচ্চতা অনেক বড় হওয়ায় ঘাসের উপরের অংশ কেটে বিভিন্ন ঘর সাজানোর জিনিস পত্র, ভ্যানিটি ব্যাগ, তৈরি করা হচ্ছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি করা এই শিল্পসামগ্রীর ভাল বাজারও রয়েছে। এতে উৎসাহিত হয়ে জেলার আরও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নদিয়ার নাকাশিপাড়া, চাকদহ এবং কৃষ্ণনগরের মোট ছ’জন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যকে পুদুচেরিতে প্রশিক্ষণে পাঠানো হচ্ছে। তাঁরা ফিরে জেলায় অন্যান্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেবেন।

জেলার চাকদহ ব্লকও একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এ দিন পুরস্কার পেয়েছে। এই ব্লকে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই দিয়ে ইটভাটা তৈরি হয়েছে, জিয়ল মাছ চাষ করে বাসিন্দাদের স্বনির্ভর করেছে। এ ছাড়াও এই ব্লকের ১২২জন শিশুকন্যার পরিবারকে ১০১টি করে তেজ পাতা গাছের চারা দিয়ে স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ধরণের অভিনব প্রকল্প গড়ে ওই ব্লক পুরষ্কার পেয়েছে। ওই ব্লকের বিডিও নিশীথ ভাস্কর পাল এদিন কলকাতার অনুষ্ঠানে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে পুরষ্কার নিয়েছেন। এই ব্লককে ১০লক্ষ টাকা এবং ট্রফি দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন