ভয় পাওয়ার ছেলে নয় রিজ

পাড়ার গর্ব ছিল যে ছেলেটি, তার কোনও শত্রু থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করেন না ডোমকলের বিডিও মোড়ের মানুষ। রিজুয়ানুর রহমকে (২২) খুনের কথা তাই তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, যে ছেলে লেখাপড়ার বাইরে আর কিছুই বোঝে না, কারও সঙ্গে মুখ তুলে কথা বলতেও পারে না, তাঁকে কেউ খুন করতে পারে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৬ ০৭:৪৬
Share:

পাড়ার গর্ব ছিল যে ছেলেটি, তার কোনও শত্রু থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করেন না ডোমকলের বিডিও মোড়ের মানুষ। রিজুয়ানুর রহমকে (২২) খুনের কথা তাই তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, যে ছেলে লেখাপড়ার বাইরে আর কিছুই বোঝে না, কারও সঙ্গে মুখ তুলে কথা বলতেও পারে না, তাঁকে কেউ খুন করতে পারে না।

Advertisement

সকলের মতো তাঁরও হয়ত নিজের প্রতি এই আস্থাই ছিল যে, তাঁর কেউ শত্রু হতে পারে না। হয়ত ওই আস্থাই তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াল। রিজুয়ানুরের আত্মীয়দের দাবি, ‘‘কেউ মারবে না ভেবেই হয়ত ও পালায়নি। আর ওকে সামনে পেয়ে খুন করেছে গভীর রাতে মেসে হামলাকারীরা।’’

গোটা ঘটনায় এ দিন দুপুর থেকে থমকে গিয়েছে ডোমকল। সকলের দাবি, এমন মেধাবী এবং ভদ্র ছেলেটাকে যারা খুন করল তাদের কড়া শাস্তি হোক।

Advertisement

কেবল পরিবার নয়, প্রতিবেশী মায়েরাও নিজের সন্তানদের বলত রিজুয়ানুরের মতো হও। স্টার পাওয়া ছাত্রটির ইচ্ছে ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কলকাতার একটি কোচিং সেন্টারে টানা এক বছর কোচিং দিয়ে জয়েন্টে ৪০০০ স্থান পেয়ে মাইক্রো বায়োলজি নিয়ে ভর্তি হয় জিয়াগঞ্জ কলেজে। কাকা আশিকুল আলমের কথায়, ‘‘আমার বিশ্বাস, যারা ওকে খুন করেছে তারা হয় ওকে চিনত না, না হলে ওরা মদ্যপ অবস্থায় ছিল। কারণ ওর সামনে দাড়ালে নিররীহ মুখটা দেখে আর কেউ ওকে মারতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস হয় না।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কথায় কথায় আমাদের সন্তানদের বলি রিজওয়ানুরের মতো হও। ওকে যারা খুন করল তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’’

প্রতিবেশী শিক্ষক কামালুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘এমন মেধাবী শান্ত নম্র ছেলে নিখোঁজ শুনে আমরা প্রথমে ভেবে ছিলাম, আক্রমণের কারণে হয়ত ভয়ে ও কোথাও লুকিয়ে আছে। কিন্ত শেষে ওর দেহ নিয়ে ফিরতে হল। ওর মৃত্যু আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি চাই।’’

বাবা একটি হাই মাদ্রাসার পার্শ্ব-শিক্ষক। তা ছাড়াও ডোমকলের প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী পরিবারের সন্তান রিজুয়ানুর। দুই ভাই আর এক বোনের বড় সে। ডোমকল ভবতারণ স্কুলের ছাত্রটির এলাকায় ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিতির পাশাপাশি লেখাপড়াতেও খুব ভাল ছিল বলে জানা গিয়েছে। এলাকার কলেজে মাইক্রো বায়োলজি পাঠ্যক্রম না থাকায় জিয়াগঞ্জ কলেজে ভর্তি হয়েছিল সে।

তার সঙ্গে কারও ঝামেলা দুরে থাক, জোরে কথাটাও হয়েছে বলে মনে করতে পারছে না, স্কুল ও কলেজ জীবনের বন্ধুরা। তার স্কুলের বন্ধুদের দাবি, রিজ কলকাতা বা পরে জিয়াগঞ্জ গিয়েছিল লেখাপড়া করতে। অনেকে হস্টেল বা মেস বাড়িতে থাকতে গিয়ে বদলে যায়। তাঁরা জানান, কিন্তু রিজকে কখনও বদলাতে দেখেননি। শ্রীপৎ সিংহ কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রবিউল হাসান বলেন, ‘‘ওর সঙ্গে কলেজে অনেকবার দেখা হয়েছে, কথাও হয়েছে। কম কথা বলা এবং ভদ্র ছেলে হিসেবেই ওর পরিচিতি ছিল। কেন এমনটা হল আমরা বুঝতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন