অবরোধে স্তব্ধ সড়ক-রেলপথ, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা

স্কুলে ডাকাতি ও সিস্টারকে ধর্ষণের অভিযোগে ক্ষিপ্ত জনতার রোষ চেহারা নিল অবরোধের। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঘণ্টা পাঁচেকের সেই অবরোধের মাসুল দিলেন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং পূর্ব রেলের শিয়ালদহ-রানাঘাট লাইনের যাত্রীরা। জেলাশাসকের দুঃখপ্রকাশ এবং পুলিশ সুপারের আশ্বাসেও চিঁড়ে ভেজেনি। আটকে পড়ে অ্যাম্বুল্যান্স, কচিকাঁচাদের স্কুলবাস। নাকাল হন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৫
Share:

স্কুলে ডাকাতি ও সিস্টারকে ধর্ষণের অভিযোগে ক্ষিপ্ত জনতার রোষ চেহারা নিল অবরোধের। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঘণ্টা পাঁচেকের সেই অবরোধের মাসুল দিলেন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং পূর্ব রেলের শিয়ালদহ-রানাঘাট লাইনের যাত্রীরা। জেলাশাসকের দুঃখপ্রকাশ এবং পুলিশ সুপারের আশ্বাসেও চিঁড়ে ভেজেনি। আটকে পড়ে অ্যাম্বুল্যান্স, কচিকাঁচাদের স্কুলবাস। নাকাল হন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ।

Advertisement

রানাঘাটের কনভেন্ট স্কুলে শুক্রবার রাতের হামলার পরে এলাকাবাসীর একটা বড় অংশের যাবতীয় রাগ গিয়ে পড়ে পুলিশ-প্রশাসনের উপরে। এ দিন সকালে তদন্তে আসা পুলিশকর্মীদের ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে-ই বিক্ষোভ আড়েবহরেও বাড়ে। জনতা সিদ্ধান্ত নেয়, প্রতিবাদ মিছিল করার। বেলা ১১টা নাগাদ ডনবস্কো মোড়ের ওই স্কুলের সামনে থেকে যে মিছিল বেরোয়, তা আধ ঘণ্টা বাদে অবরোধের চেহারা নেয় তিনশো মিটার দূরের মিশন রেলগেট ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগস্থলে। বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন ও যান চলাচল।

অবরোধকারীদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সব স্তরের মানুষ এক হন। সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারের সুবিচার চাই’। কিছু স্কুল পড়ুয়াকে কখনও রেললাইনের উপরে দাঁড়িয়ে-বসে স্লোগান দিতে দেখা যায়। খবর পেয়ে সেখানে যান রেল পুলিশের রানাঘাটের আইসি সুভাষ রায়। তাঁর কথায় কাজ হয়নি। বেলা ১২টা নাগাদ হাজির হন জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ ও জেলাশাসক পিবি সালিম। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে জেলাশাসক বলেন, “অভিযুক্তদের দ্রুত ধরা হবে।” এসপি-র আশ্বাসে লাভ হয়নি। দু’জনেই ফিরে যান। অবরোধকারীদের বলতে শোনা যায়, “অভিযুক্তদের ধরার ব্যাপারে প্রশাসন লিখিত প্রতিশ্রুতি না দিলে অবরোধ চলবে।”

Advertisement

অবরোধের ফলে গেদে-কৃষ্ণনগর-লালগোলা-শান্তিপুর শাখার ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “ওই লাইনে ২৩টি ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে। রেলকর্মীরা চেষ্টা করেও অবরোধ তুলতে পারেননি।”

রানাঘাট স্টেশনে প্রায় দু’ঘণ্টা দুই সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন অমিতা চক্রবর্তী। যাওয়ার কথা ছিল মদনপুরে। তাঁর বক্তব্য, “কারণ যা-ই হোক না কেন, এ ভাবে অবরোধ করা ঠিক নয়। দু’টো বাচ্চাকে নিয়ে কত ক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছি! অপরাধ করেছে দুষ্কৃতীরা। তার জন্য আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে শাস্তি দেওয়া কেন?” একই সুর সব্জি ব্যবসায়ী কমল বিশ্বাসের গলাতেও। বললেন, “রানাঘাট থেকে সব্জি নিয়ে শিয়ালদহে যাওয়ার কথা। সময়ে পৌঁছতে না পারায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’’

একই দশা হয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে আটকে পড়া যাত্রীদেরও। রানাঘাটের ওই রেলগেটের দু’ধার বরাবর সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে কলকাতা ও উত্তরবঙ্গগামী বাস-লরি-ট্রাক ও ছোট গাড়ি। বাসযাত্রী সারিকুল ইসলাম বলেন, “কলকাতায় যাব বলে বাসে উঠেছিলাম। বসে আছি, তো বসেই আছি। কারণ যতই ন্যায্য হোক, অবরোধ কোনও অবস্থাতেই সমর্থনযোগ্য নয়। অ্যাম্বুল্যান্সের রোগী বা স্কুলের বাসে আটকে পড়া বাচ্চাদের কথাটা ভাবলেন না কেউ!”

বিকেল ৪টে নাগাদ রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, নদিয়া জেলা সভাধিপতি বাণীকুমার রায়, রানাঘাট পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় ও রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক আবীররঞ্জন বিশ্বাসেরা কিছু স্থানীয় বাসিন্দাকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেখানে দোষীদের গ্রেফতার ও এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেয় প্রশাসন। সে খবর পেতে বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ অবরোধ ওঠে।

অবরোধ ছাড়া, অন্য ভাবে প্রতিবাদ করা যেত না?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবরোধকারীদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, “জানি, অনেকের ভোগান্তি হয়েছে। কিন্তু স্কুলটায় যা ঘটেছে, সেটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এলাকায় গুণ্ডাদের অত্যাচার সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। প্রশাসন সব জেনেও চোখে ঠুলি পরে বসে রয়েছে। তাদের ঝাঁকুনি দিতে এমন কিছু না করলে চলছিল না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন