খানাখন্দে ভরেছে জাতীয় সড়ক। প্রতিবাদে বাঁশ পুঁতে অবরোধ।— নিজস্ব চিত্র
৮০ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কারের দাবিতে সোমবার ফরাক্কার নিশিন্দ্রার কাছে বাঁশ, খুঁটি পুঁতে অবরোধ করলেন কয়েক’শো গ্রামবাসী। সোমবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে শুরু হওয়া ওই অবরোধ ওঠেনি গভীর রাতেও। অবরোধের ফলে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে পাথর বোঝাই কয়েক’শো লরি।
বিহারের মোকামা থেকে শুরু হয়ে মুঙ্গের, সাহেবগঞ্জ, বারহারোয়া হয়ে ফরাক্কায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে মিশেছে এই জাতীয় সড়কটি। ৩১০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই লেনের এই সড়ক পথের মাত্র ১০ কিলোমিটার রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সড়কের ৩০০ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। কিন্তু ফরাক্কার বেওয়া থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত সড়কের কাজ এখনও শুরু করা হয়নি। এই অংশের রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। খানাখন্দ বাড়তে বাড়তে ডোবার আকার নিয়েছে। প্রায় প্রতিদিন এই পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একাধিক গাড়ি। ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথ এই সড়কটি। ফরাক্কার বেওয়া, ধর্মডাঙা, ঘোড়াইপাড়া, শঙ্করপুর, নিশিন্দ্রা সহ কয়েক’টি গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াত চলে এই পথে।
অবরোধকারীদের অন্যতম নিশিন্দ্রার সুভাষ মণ্ডল জানান, এই পথ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ লরি ঝাড়খণ্ড থেকে পাথর বোঝাই করে এ রাজ্যে ঢোকে। গত বছরের ২ নভেম্বর রাস্তার বেহাল দশার প্রতিবাদ জানিয়ে কয়েক’শো গ্রামবাসী একই ভাবে অবরোধে সামিল হয়েছিলেন। ফরাক্কার বিডিও সুব্রত চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সে দিন আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘স্থানীয় ভাবে প্রশাসন এই সড়ক পথটি চলার মত করে সংস্কার করে দেবে।’ আশ্বাসই সার, কাজের কাজ হয়নি কিছুই।
স্থানীয় বাসিন্দা ফাইজুর রহমানের আক্ষেপ, ‘‘বিহার, ঝাড়খণ্ডে দুই লেনের ঝাঁ চকচকে রাস্তা, অথচ পশ্চিমবঙ্গের ১০ কিলোমিটার রাস্তা আর সংস্কার করা হচ্ছে না।’’ অবরোধকারীদের দাবি, এই বৈষম্যের প্রতিবাদেই এ দিনের অবরোধ। তাঁদের হুঁশিয়ারি, ‘‘যতক্ষণ না কোনও প্রশাসনিক কর্তা ঘটনাস্থলে আসবেন ততক্ষণ অবরোধ চলবে।’
গ্রামবাসীর অনমনীয় মনোভাবের জেরে সন্ধ্যে পর্যন্ত চলে অবরোধ। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় পাথর বোঝাই কয়েক’শো লরি। ফরাক্কার বিডিও সুব্রতবাবু গত বছর অবরোধ তুলতে রাস্তা সাড়ানোর আশ্বাস দিলেও এ দিন আর মুখ খুলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘আমি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করছি না।’’ বিডিও-র কথা শুনে বিক্ষোভকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। অবরোধকারীদের অন্যতম সুভাষবাবু ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, ‘‘বিডিও কথা দিয়েও রাখেননি। এ বার তাঁকে ঘটনাস্থলে আসতে হবে। না হলে অবরোধ তোলা হবে না!’’
ফরাক্কার বিধায়ক মইনুল হক জানান, ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি এই সড়ক পথটিকে জাতীয় সড়ক ৮০ হিসেবে ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০০৮ সালে এই জাতীয় সড়কটি দু’লেনের করতে ৭৫৫.৫৮ কোটি টাকা মঞ্জুরও করে কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক। তিনি আরও জানান, এলাকার অন্তত ১২টি গ্রাম এই পথ ব্যবহার করে। ঝাড়খণ্ডে যাতায়াতের সবচেয়ে সহজ পথ এটি। বেওয়া ও শঙ্করপুরে এই পথটির উপর দু’টি সেতু রয়েছে। ফিডার ক্যানাল লাগোয়া একটি প্রায় ১০০ মিটার ‘কাটান’ (মাঝে মধ্যেই ঝাড়খণ্ডের বন্যার জল বের করতে পথের এই অংশ কেটে দেওয়া হয়) পথ রয়েছে। আগে এই সড়ক পথের ১০ কিলোমিটার অংশ নিজেদের প্রয়োজনে রক্ষণাবেক্ষণ করত ফরাক্কা ব্যারাজ। ব্যারাজ তা ইতিমধ্যেই হস্তান্তর করে দিয়েছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে। ব্যারাজের তৈরি সেতুগুলিও কনডেমড ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে তিনটি এলাকাতেই নতুন করে সেতু গড়তে হবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে। বিধায়কের কথায়, ‘‘এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে বারবার দরবার করা হয়েছে। কিন্তু ফল হয়নি।’’
মালদহের জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এক পদস্থ কর্তা জানান, ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে অর্থ মঞ্জুর হলেও দীর্ঘ দিন রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি। কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক সড়কটি নির্মাণের দায়িত্ব দেন রাজ্য পূর্ত সড়ক দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগকে। তখন দেখা যায়, গুমানি নদীর উপরে বেওয়া সেতু পর্যন্ত জাতীয় সড়কটির ২৮২.৬ কিলোমিটার কাজ শেষ করে ফেলেছে বিহার ও ঝাড়খণ্ড। ফলে কিছুটা চাপে পড়ে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য পূর্ত সড়ক দফতরের জাতীয় সড়ক উইং সড়ক ও সেতু তৈরির জন্য নতুন করে সমীক্ষা শুরু করে। কারণ এই সড়কের পাশেই এনটিপিসি ও ফরাক্কা ব্যারেজ। তাদের সঙ্গে আলোচনায় পরে পথটির নানা কারিগরি পরিবর্তন প্রয়োজন হয়ে পড়ে। পরে সেই সমীক্ষার কাজ যথা সময়ে শেষ না হওয়ায় সড়ক পথের এই বেহাল অবস্থা কাটিয়ে কাজ শুরু করতে পারেনি রাজ্য সরকার।
অবরোধকারীরা এ সব শুনতে রাজি নন। তাঁরা চান দ্রুত রাস্তা সংস্কার করুক প্রশাসন। প্রতিকার না পেলে টানা অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।