TMC Internal Conflict

বহরমপুরে ভোটের প্রস্তুতিতে শাসক দলের ভয় অন্তর্দ্বন্দ্ব

শুক্রবারের নির্দেশ পাওয়ার পরে তৃণমূল রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছে। রবিবার বহরমপুরে বেলডাঙায় জনসভা করেছে জেলা তৃণমূল।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:৩৭
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

তৃণমূলের কোন্দল নতুন কিছু নয়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে বেশ কিছু বিধায়ক এবং তাঁদের দলের ব্লক সভাপতির গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। সম্প্রতি জেলায় নতুন ব্লক সভাপতি ঘোষিত হলেও সেই দ্বন্দ্ব এখনও কাটেনি। এই আবহে শুক্রবার কলকাতার বৈঠকে এ রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নয়, একলা চলার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সেই সঙ্গে দলের দখলে থাকা দু’টি সহ মুর্শিদাবাদের তিনটি আসনে তিনি দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য দলীয় নেতাদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যা শুনে ওই বৈঠকেই জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ফিরহাদ হাকিম জেলার তিনটি আসনে প্রার্থীদের জয়ী করবেন বলেছেন। তবে দলের এমন দ্বন্দ্বের আবহে বহরমপুরের মতো অধীর চৌধুরীর শক্ত ঘাঁটিতে কী দাঁত ফোটাতে পারবে তৃণমূল? বহরমপুরে দখলে তৃণমূল কী প্রস্তুতি নিচ্ছে?

Advertisement

শুক্রবারের নির্দেশ পাওয়ার পরে তৃণমূল রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছে। রবিবার বহরমপুরে বেলডাঙায় জনসভা করেছে জেলা তৃণমূল। এদিন দুপুরে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নাজমুল মিঞা সানসাইন সংগঠনের নেতৃত্বদের নিয়ে বৈঠক করে লোকসভা নির্বাচনের জন্য ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বাড়ি বাড়ি সরকারি প্রকল্পে প্রচারে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে যারা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাঁরা যাতে সরকারি সুযোগ পান সে বিষয়ে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।

তৃণমূলের বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘বড় সংসারে চার ভাই থাকলে ভাইয়ে ভাইয়ে ছোটখাটো সমস্যা হয়। কিন্তু শত্রুর আক্রমণ হলে সব ভাই এক সঙ্গে তার মোকাবিলা করে। আমরাও লোকসভা ভোটে তেমনই মোকাবিলা করব।’’ তৃণমূলের বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘‘যে সমস্যা রয়েছে তা ভোটের আগেই মিটে যাবে। আমরা বহরমপুর সহ জেলার তিনটি আসনে জয়লাভ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি।’’ বহরমরপুর দখলে কী কর্মসূচি নিচ্ছেন? রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘‘জেলায় ফিরহাদ হাকিম আসবেন, দিদি আসবেন। দলের একের পর এক কর্মসূচি নেওয়া হবে। সে সব আপনারা দেখতে পাবেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘বিধানসভা আর লোকসভা নির্বাচন এক নয়। বহরমপুর সহ জেলার তিনটি আসনই আমাদের পাব।’’

Advertisement

বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বহরমপুর, বেলডাঙা, নওদা, রেজিনগর, কান্দি, ভরতপুর ও বড়ঞা বিধানসভার আসন পড়ে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর, কান্দি ও বড়ঞা বিধানসভা আসনে লিড পেয়েছিলেন অধীর চৌধুরী। বাকি নওদা, বেলডাঙা, ভরতপুর ও রেজিনগরে তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব সরকার লিড পেয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও অধীর চৌধুরী ৮০ হাজার ৬৯৬ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। তবে ২০২১ সালের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে বহরমপুর কেন্দ্রে বিজেপি এবং বাকি ৬ টি কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এই লোকসভার আওতায় থাকা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের অধিকাংশ তৃণমূলের দখলে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কী বহরমপুরের মতো অধীর গড় দখল করতে পারবে সেই প্রশ্ন উঠছে।

তবে তৃণমূলের এক নেতা জানাচ্ছেন, ভরতপুরের দলীয় বিধায়ক হুমায়ূন কবীরের সঙ্গে সেখানকার তৃণমূলের দুই ব্লক সভাপতির বিরোধ সেই পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে। সদ্য ব্লক সভাপতিদের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে সেখানে পুরনো ব্লক সভাপতিদের নাম রয়েছে। নওদার ব্লক সভাপতি সফিউজ্জামান শেখের সঙ্গে সেখানকার বিধায়ক শাহিনা মমতাজ খানের বিরোধ নতুন নয়। সেখানেও সফিউজ্জামানকে পুনরায় ব্লক সভাপতি করা হয়েছে। ফলে এই বিধানসভা এলাকায় দ্বন্দ্ব থেকে গিয়েছে। বড়ঞা দক্ষিণ ব্লকে নতুন ঘোষিত সভাপতির বিরুদ্ধে রবিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছেন দলেরই লোকজন। শুধু বহরমপুর ও কান্দি বিধানসভায় তৃণমূলের দ্বন্দ্ব খানিকটা কম রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন