দাওয়াই কোথায়, গুজবের শিকার বাড়ছেই

কখনও ছেলে ধরা, কখনও বা ছিঁচকে চোর, আর সন্দেহ থেকে নেমে আসে গণধোলাই। কৃষ্ণনগর থেকে অরঙ্গাবাদ, ডোমকল থেকে বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর, রেহাই মেলে না কারও।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ১৩:১০
Share:

রোগটা মাঝে মধ্যেই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, থিতিয়ে আসার আগে, কখনও এক কখনও বা একাধিক— নিশ্চুপ বলি। তার পর, থেমে যায় এক সময়ে।

Advertisement

গুজব, এমনই দাওয়াইহীন এক রোগ।

কখনও ছেলে ধরা, কখনও বা ছিঁচকে চোর, আর সন্দেহ থেকে নেমে আসে গণধোলাই। কৃষ্ণনগর থেকে অরঙ্গাবাদ, ডোমকল থেকে বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর, রেহাই মেলে না কারও।

Advertisement

গত কয়েক বছরে সেই গণধোলাইয়ে মারা গিয়েছেন বহু মানুষ। কিন্তু টনক নড়েছে কি প্রশাসনের, সম্বিত ফিরেছে কি পুলিশের? প্রশ্নটা থেকেই যায়।

সেই তালিকায় শেষ সংযোজন মঙ্গলবার, সুতির গণপিটুনির ঘটনা।

ছেলেধরা গুজবের এই হাওয়া মুর্শিদাবাদে অবশ্য অচেনা নয়। গ্রামগুলি থেকে কোনও ছেলেপুলের নিখোঁজ হওয়ার খবর না থাকলেও গত কয়েক বছরে, কখনও ডোমকল কখনও বা লালগোলা কিংবা রানিনগরে এমন গুজবে গণপিটুনির ঘটনা কম ঘটেনি। প্রহৃতকে উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের মার খাওয়ার নজিরও রয়েছে জলঙ্গিতে।

২০১৫ সালের মার্চে ডোমকলে গণপিটুনির জেরে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। এক দুপুরে রানিনগর বাজারের প্রাথমিক স্কুল থেকে তিন পড়ুয়াকে ছেলেধরা তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে গুজব ছড়ায়। কার ছেলে-মেয়ে খোয়া গেল? কেউ জানে না। কিন্তু গুজব ছড়াতে থাকে হাওয়ার বেগে জলঙ্গি থেকে ইসলামপুর। সেই বছরের এপ্রিলে সুতি, সমশেরগঞ্জ থানা এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছেলেধরা সন্দেহে অন্তত সাত জনকে ধরে মারধর করে গ্রামবাসীরা।

হাতের কাছে টাটকা উদাহরণও কম নেই। শুরুটা হয়েছিল কল্যাণীতে। গত জানুয়ারিতে। একটি আশ্রমে চুরি হয়। পর দিন একই এলাকার একটি বাড়িতে। তার পরের দিন স্থানীয় আরও একটি বাড়িতে। চুরির পরিমাণও সামান্যই। গুজবটা রটতে থাকে তার পরেই। তা ছড়াতে সময় নেয়নি। প্রথমে কল্যাণী, পরে হরিণঘাটা, চাকদহ, রানাঘাট। দিন কয়েকের মধ্যে কৃষ্ণনগর, চাপড়াতেও। একের পর এক এলাকায় শুরু হয় গণপিটুনি। কল্যাণীর গয়েশপুরে প্রাণ যায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের।

ক্রমে নদিয়া ছাড়িয়ে গুজব ছড়ায় বর্ধমানেও। রানাঘাটের হবিবপুরের জনাকয়েক বাসিন্দা কালনায় বাগান পরিচর্যার কাজে গিয়েছিলেন। বিস্তর জেরার পরে তাঁদের চোর ‘সাব্যস্ত’ করে জনতা। শুরু হয় গণপিটুনি। ঘটনাস্থলে এক জন, পরে হাসপাতালে আরও এক জন। বছর তেরো আগে কৃষ্ণনগরে মুখে মুখে ছড়িয়েছিল ফায়ারম্যানের কথা। বিভিন্ন বাড়িতে নাকি আগুন ছুড়ে জিনিসপত্র-বিছানা-বালিশ পুড়িয়ে দিচ্ছে সে। পুলিশ-দমকলের নাকানিচোবানি খাওয়ার জোগাড়। এক সময় গুজব থামে। ফায়ারম্যান কিন্তু ধরা পড়েনি। এক পুলিশ কর্তা বলেছেন, ‘‘আসলে ফায়ারম্যান, ছেলেধরারা কখনও ধরা পড়ে না। কিন্তু গুজব থামানোর পদ্ধতিটাও আমাদের অজানা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন