পরিচয়: নিজের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেখাচ্ছেন ষষ্ঠী মাঝি। নিজস্ব চিত্র
তিনি নাকি মারা গিয়েছেন!
অন্তত সরকারি খাতার খতিয়ান তেমনই বলছে। কিন্তু তিনি, সত্তরোর্ধ্ব ষষ্ঠী মাঝি দিব্যি বেঁচে আছেন। সকালে বাড়ির সামনে একটু পায়চারি আছে। দুপুরে আলু, বড়ি, সজনে ডাঁটার পাতলা ঝোল দিয়ে ভাত মাখছেন। বিকেলে পাড়ার তেমাথায় নিয়ম করে আড্ডা দিচ্ছেন। আর রাতে খাওয়া শেষ হলে নীল সুতোর বিড়িতে সুখটান? আজ্ঞে, তা-ও আছে।
বাড়ির দাওয়ায় বসে সুতির বংশবাটির ষষ্ঠী বলছেন, ‘‘সবই আছে কর্তা, মনে খালি সুখ নেই!’’ সত্যিই তো, যে মানুষটা দিব্যি বেঁচেবর্তে আছেন, তাঁকে যদি কেউ দুম করে মৃত বলে ঘোষণা করে, কারই বা ভাল লাগে? করুণ মুখে বৃদ্ধ জানাচ্ছেন, সেটাও নয়, আসল কারণ হচ্ছে, তাঁকে মৃত বলে ধরে নিয়ে বার্ধক্য ভাতাটাই তো সরকার বন্ধ করে দিয়েছে।
ভুল যে হয়েছে, তা মানছেন বংশবাটি পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের খুকি রাজবংশীও। তিনি বলছেন, ‘‘মরা মানুষকে জীবিত করতে একটু সময় তো লাগবে। আমরা চেষ্টা করছি ভুলটা যাতে দ্রুত শুধরে নেওয়া যায়।”
সুতি ১ বিডিও দীপঙ্কর রায় বলছেন, “কী ভাবে ওই বৃদ্ধের নাম তালিকা থেকে বাদ গেল সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি। যদি কোনও ভুলভ্রান্তি ঘটে থাকে তা অবশ্যই সংশোধন করা হবে। বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েতের প্রধানের সঙ্গেও কথা বলব।”
বংশবাটির রাজবংশী পাড়ার বাসিন্দা ষষ্ঠী মাঝি। বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবার। ষষ্ঠী ও তাঁর স্ত্রী বেলা মাঝি দু’জনেই বার্ধক্য ভাতার টাকা পেতেন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মারা যান বেলাদেবী। তালিকা থেকে বেলাদেবীর সঙ্গে সঙ্গে নাম কাটা যায় ষষ্ঠী মাঝিরও।
প্রশাসনের কর্তারা সকলেই আশ্বাস দিচ্ছেন, বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু, জলজ্যান্ত একটা লোককে জীবিত প্রমাণ করতে প্রশাসনের তিন বছর সময় লেগে যাচ্ছে? সে প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।
আকাশের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বৃদ্ধ বলছেন, ‘‘ভাতার ওই টাকাটুকুই আমার সম্বল ছিল। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে গিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নিয়ে আসতাম। এখন ব্যাঙ্কবাবু থেকে পঞ্চায়েত কর্তা সকলেই বলছেন, আমি নাকি মৃত! বেলা, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?’’