জি ডি বিড়লা স্কুলের ঘটনার পরে নতুন করে নড়েচড়ে বসেছেন বিভিন্ন স্কুলের কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকেরা। নিয়মিত অভিভাবক-শিক্ষক বৈঠকের উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
কলকাতার ওই স্কুলটিতেও আগে অভিভাবক ফোরাম গড়ে তোলার দাবি উঠেছিল। কিন্তু স্কুল তা নিয়ে উদ্যোগী হয়নি। ফলে অভিভাবকদের ক্ষোভ জমছিলই। এর মধ্যে শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সামনে আসতেই বারুদে আগুন লাগে।
নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন স্কুলের অভিজ্ঞতা বলছে, যেখানে অভিভাবকদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক হয়, সেখানে সমস্যা অনেকটাই কম। যারা করে না, সে সব স্কুলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগেই থাকে, গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে শিক্ষকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্দি করে রাখার ঘটনাও ঘটে।
মুড়াগাছা হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক বিমলেন্দু সিংহ রায় বলেন, “নিয়মিত বৈঠক করা হলে অভিভাবকদের মনে সন্দেহের অবকাশ থাকে না। তাঁদের মাধ্যমে পড়ুয়াদের সমস্যার কথা জানতে পারি, সেই মতো ব্যবস্থা নিতে পারি।” চুঁয়াপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী সেনের মতে, ‘‘জি ডি বিড়লা স্কুলের ঘটনার পরে আরও বেশি করে মনে হচ্ছে, অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের মত বিনিময় করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।’’ হিকমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘পঠনপাঠন, স্কুলের উন্নয়ন ও সমস্যা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। তবে এর পাশাপাশি ছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতার পাঠও দিতে হবে নিয়মিত।’’
কৃষ্ণনগর হাইস্কুলে বছরে বড় জোর বার দুই অভিভাবক-শিক্ষক বৈঠক হয়। শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা, নিচু ক্লাসে অভিভাবকদের উপস্থিতির হায় ৮০-৮৫ শতাংশ হলেও উঁচু ক্লাস তা ভীষণ রকম কমে যায়। ফলে, বৈঠক সফল করার দায়িত্ব যে শুধু স্কুলেরই নয়, অভিভাবকদেরও, তা নিয়ে সচেতনতার অভাবও স্পষ্ট।
চাপড়ার বড় আন্দুলিয়া হাইস্কুলে প্রায় আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রী। কিন্তু চিঠি দিয়ে ডেকেও মাত্র একশো থেকে দেড়শো অভিভাবকের দেখা মেলে। স্কুলের শিক্ষক অরূপ সরকার বলেন, “ওঁরা এলে আমাদেরই সুবিধা। নানা বিষয়ে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। না এলে কী করব?” ধর্মদা বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীবাস দাসও একই কথা জানান।
নিয়মিত অভিভাবক শিক্ষকদের বৈঠক হলেই যে সমস্যা মিটে যায়, তেমনটা অবশ্য মোটেই নয়। মাস তিনেক আগেই নবগ্রামের এক স্কুলে শিক্ষাকর্মীর বিরুদ্ধে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছিল। ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন অভিভাবকরা। শিল্পীর মতে, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি হয় না বলেই যা কিছু করে পার পেয়ে যাবেন বলে মনে করছে একশ্রেণির লোক।’’
মুর্শিদাবাদ জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে বলেন, ‘‘শিক্ষার অধিকার আইনে দু’মাসে এক বার অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করার কথা স্পষ্ট ভাবে বলা আছে। তবে পড়ুয়া-শিক্ষক সম্পর্ক খারাপের চেয়েও শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ, এমন স্কুলগুলিকে চিহ্নিত করে সতর্ক করা হয়েছে।’’ নদিয়ার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) মিতালী দত্ত বলেন, “আমরা চাই, স্কুল কর্তৃপক্ষ যত বেশি সম্ভব অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করুন। তাতে সকলেরই ভাল।”