পাশ করেনি সকলে, তবু পুরস্কৃত স্কুল

বোর্ডের পরীক্ষায় বসা সকলেই পাশ করেছে তো? স্কুল কর্তপক্ষ, শিক্ষা দফতরের এই সহজ প্রশ্নটার যে ‘অসত্য’ উত্তর দিতে পারে, ভাবতেই পারেননি জেলা স্কুল পরিদর্শক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৫
Share:

মাধ্যমিকের ফলের তালিকা।— নিজস্ব চিত্র

বোর্ডের পরীক্ষায় বসা সকলেই পাশ করেছে তো?

Advertisement

স্কুল কর্তপক্ষ, শিক্ষা দফতরের এই সহজ প্রশ্নটার যে ‘অসত্য’ উত্তর দিতে পারে, ভাবতেই পারেননি জেলা স্কুল পরিদর্শক।

স্কুলের পাঠানো পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তাই স্কুল কর্তৃপক্ষকে সংবর্ধনা দিতেও পিছপা হননি তিনি।

Advertisement

কিন্তু, জেলা সদরে ঢালাও অনুষ্ঠানে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাসিমুখে সে পুরস্কার নেওয়ার দিন কয়েকের মধ্যেই জানাজানি হয়, সকলেই নয়, বহরমপুরের কোদলা বিজয়কৃষ্ণ আদর্শ বিদ্যামন্দিরের এক ছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেনি।

আর তার জেরেই ওই স্কুল কর্তৃপক্ষকে পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার ফরমান জারি করেছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই-মাধ্যমিক) পূরবী দে বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়েও কেউ যদি এমন ভুল তথ্য ইচ্ছাকৃত বাবে দেন, তাহলে তাঁর স্কুলের ছেলেমেয়েরা কী শিক্ষা পাবেন বলুন তো!’’

বিষয়টা নিয়ে বিস্তারিত তদন্তে নামছে জেলা শিক্ষা দফতর। এ ব্যাপারে জেলাশাসকের কাছেও নালিশ জানিয়েছেন পূরবীদেবী বলে জানা গিয়েছে। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও ওই ঘটনায় বেজায় চটেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সরজমিনে তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

তবে এ নিয়ে কোনও হেলদোল চোখে পড়েনি ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক সুভাষচন্দ্র সিমলা নন্দীর। এ দিন তাঁকে বার বার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া য়ানি তাঁকে।

তবে স্কুল পরিচালন সমিতির এক সদস্য বলেন, ‘‘এ ব্যপারে প্রধান শিক্ষককে বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি আমল দিতে চাননি।’’

মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় যে সব স্কুল থেকে একশো শতাংশ পড়ুয়া উত্তীর্ণ হয়েছে, সেই সব স্কুল কর্তৃপক্ষকে উৎসাহ দিতে বিশেষ শংসাপত্র দেওয়ার রেওয়াজ চালু করেছে জেলা প্রশাসন। এ বছর থেকে চালু হওয়া সেই স্কুলগুলিকে গত ১৪ অগস্ট বহরমপুরের রবীন্দ্রসদনে পুরস্কারও দেওয়া হয়। জেলার ২৩টি মাধ্যমিক ও ৫টি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতে জেলাশাসক সেই শংসাপত্র তুলেও দেন।

সে দিন কোদলা বিদ্যামন্দিরের স্কুলের প্রধান শিক্ষকেও দেখা যায়, হাসি মুখে মঞ্চে উঠে শংসাপত্র নিচ্ছেন। মঞ্চের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে ছবিও তোলেন তিনি।

তবে, বিষয়টা জানাজানি হয় দিন কয়েকের মধ্যেই। চলতি বছরে ওই স্কুলের ৮৪ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৮৩ জন। পাশ করতে পারেনি এক ছাত্রী।

আন্দবাজারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ওই ছাত্রী নিজেই জানান, ই ছাত্রী জানায়, তার প্রাপ্ত নম্বর ১৫৯। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ সংশাপত্র পাওয়ার জন্য তার অনুত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি বেমালুম চেপে যায়।

কী ভাবে এক ছাত্রীর ফেল করার বিষয়টি প্রধান শিক্ষক চেপে গেলেন? ওই স্কুলের শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষার ফল জানিয়ে ‘রেজাল্ট শিট’ দেয়। তা নোটিস বোর্ডে টাঙাতে হয়। অকৃতকার্য হওয়া ছাত্রীটির নাম ছিল সবার শেষে, প্রধানশিক্ষক সেই ‘শিট’ থেকে ওই ছাত্রীর নামটা ছিঁড়ে ফেলে দেন।

তার পরে, ২০১৫ সালে প্রশাসনের কাছ থেকে ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার পেয়ে স্কুলের গেটে বড় করে ফ্লেক্স টাঙিয়ে পুরস্কার প্রাপ্তির বিষয়টি প্রচারও করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন