Women are Warriors

অভাব-অসুর বধে দশভুজা সীমা

বাড়িতে রয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত স্বামী প্রশান্ত চক্রবর্তী। আর নয় বছরের মেয়ে রিয়া। সন্ধে হলে মেয়েকে গৃহশিক্ষকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে ফুটব্রিজে চলে আসেন সীমা।

Advertisement

সুদেব দাস

রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:০১
Share:

ফুটব্রিজে আনাজ নিয়ে বসে সীমা চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।

পেটের তাগিদ, মেয়েকে বড় করে তোলার জেদ আর অসুস্থ স্বামীকে সুস্থ করে তোলার প্রাত্যহিক সংগ্রাম। লড়াইয়ে টিকে থাকতে মানুষটি যেন হয়ে ওঠেন সংসারের দশভূজা।

Advertisement

তিনি রানাঘাট শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তম নাসার বাসিন্দা সীমা চক্রবর্তী। দিনে চার বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন। রাতে ফুটব্রিজে আনাজ-বিক্রেতা। সামনে রাখা থাকে কুলেখাড়া পাতা, লাউ, পুঁই শাক।

বাড়িতে রয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত স্বামী প্রশান্ত চক্রবর্তী। আর নয় বছরের মেয়ে রিয়া। সন্ধে হলে মেয়েকে গৃহশিক্ষকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে ফুটব্রিজে চলে আসেন সীমা। আনাজের পসরা সাজিয়ে বসেন। অনেক রাত পর্যন্ত চলে ক্রেতাদের অপেক্ষা। ফের পর দিন ভোরে উঠে কাজে বেরনো। এ ভাবেই বছরের পর বছর কাটছে তাঁর। সীমা বলেন, ‘‘আমার স্বামী আগে ট্রেনে হকারি করত। বছরছয়েক আগে হৃদরোগ ধরা পড়ে। তখন থেকেই সংসারের হাল ধরা শুরু। তিন জনের পেট চালানো, স্বামীর চিকিৎসার খরচ, মেয়েকে স্কুলে পড়ানো সবটাই সামলাতে হচ্ছে। এতে আমার কোনও কষ্ট হয় না।’’

Advertisement

মাঝে-মধ্যে সন্ধ্যার পর মেয়ের হাত ধরে স্ত্রীর কাছে ফুটব্রিজে এসে কিছুটা সময় কাটিয়ে যান সীমার স্বামী। মায়ের পাশে বসে থাকে ঋষি অরবিন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ক্রেতাদের ব্যাগে কুলেখাড়া পাতা গুঁজে দিতে দিতে দু’-একটা কাঁটাও বিঁধে যায় কচি হাতে।

কী ভাবে সামলাচ্ছেন সব কিছু? চোখের জল মুছে সীমা বলেন, ‘‘পুজো আসছে। ট্রেনে এখন যাত্রীদের ভিড়ও বেশি। কলকাতা, কাঁচরাপাড়া থেকে বাবা-মায়েরা সন্তানের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনে বাড়ি ফেরেন। আর আমি কোনও দিন ২০০ টাকা, কোনও দিন তারও কম নিয়ে বাড়ি ফিরি। তবু কষ্ট হয় না। মেয়েকে যে বড় স্কুলে পড়াতে হবে।’’

শেষ কবে পুজোয় স্বামী-মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মণ্ডপে প্রতিমা দর্শনে গিয়েছেন, মনে নেই সীমার। দেবীপক্ষ আসে, যায়। বদলায় না সীমার জীবন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন