প্রশাসনকেই দুষছে শান্তিপুর

কালনায় নৌকাডুবির ঘটনায় অশান্তির আঁচ লাগল নদিয়ার শান্তিপুরেও। রবিবার সকাল থেকেই রণক্ষেত্র হয়ে উঠল শান্তিপুরের নৃসিংহপুর ঘাট। নিখোঁজদের উদ্ধার কাজে ঢিলেমির অভিযোগ তুলে পুলিশ-দমকল বাহিনীর উপর চড়াও হয় জনতা। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় লঞ্চ ও ভুটভুটিতে। পাল্টা পুলিশ রাবার বুলেট চালায়। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল। পুলিশের বিরুদ্ধে বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০৩:৩৮
Share:

কালনায় নৌকাডুবির ঘটনায় অশান্তির আঁচ লাগল নদিয়ার শান্তিপুরেও। রবিবার সকাল থেকেই রণক্ষেত্র হয়ে উঠল শান্তিপুরের নৃসিংহপুর ঘাট। নিখোঁজদের উদ্ধার কাজে ঢিলেমির অভিযোগ তুলে পুলিশ-দমকল বাহিনীর উপর চড়াও হয় জনতা। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় লঞ্চ ও ভুটভুটিতে। পাল্টা পুলিশ রাবার বুলেট চালায়। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল। পুলিশের বিরুদ্ধে বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই দুর্ঘটনা তো ঘটারই ছিল। ফি বছর কালনাতে ভবা পাগলার মেলা বসে। নদিয়া থেকে নদীপথে বহু মানুষ সেখানে যান। শনিবারেও গিয়েছিলেন। মাঝিদের নিষেধ অগ্রাহ্য করেই শ’দুয়েক লোক উঠে পড়ে নৌকাতে। তাতেই ভুটভুটি উল্টে লোকজন নদীতে পড়ে যান। এত বড় মেলা, লোকজনকে সামাল দেওয়ার মতো প্রশাসনের তরফে কোনও বছরই তেমন ব্যবস্থা থাকে না। এ বারেও ছিল না। আর তারই খেসারত দিতে হল সাধারণ মানুষকে। প্রশাসন সূত্রে খবর, শনিবার রাতের ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৪ জন নিখোঁজ।

এ দিকে নৌকাডুবির পরে রাত কাবার। নিখোঁজদের পরিবারের লোকেরা রাতভর নদীর পারেই অপেক্ষা করেছেন। অথচ খান কয়েক নৌকা নিয়ে গঙ্গায় ঘোরাঘুরি ছাড়া তেমন কোনও প্রশাসনিক উদ্যোগ চোখে পড়েনি বলেই অভিযোগ। রবিবার সকাল সাতটা নাগাদ ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে জনতার। উপস্থিত জনতা নিখোঁজদের খোঁজে নদীতে নামার তোড়জোর শুরু করে। বাধা দেয় পুলিশ। তারপর লাঠি উঁচিয়ে তাদের তাড়া করে। জনতাও ছাড়ার পাত্র নয়। তারা পুলিশকে লক্ষ করে ইট পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাকুল্যে জনা ষাটেক পুলিশ কর্মী। জনতার সংখ্যা কয়েক হাজার। ফলে পিছু হটতে হয় পুলিশকে। তখন নদীর পাড়ে থাকা একটি লঞ্চ-সহ ছ’টি ভুটভুটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষিপ্ত জনতা।

Advertisement

খবর যায় দমকলে। কিন্তু দমকলের ইঞ্জিনও নদীর পাড়ে আগেই আটকে দেওয়া হয়। দমকলের গাড়ি লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। তাতে জখম হন তিন দমকল কর্মী। ঘটনাস্থলে তখন পুলিশ কর্মীদের চারদিক থেকে ঘিরে রাখে জনতা। পুলিশকে লক্ষ করে এলোপাথাড়ি ইটও ছোড়া হয়। ইটের ঘায়ে দু’জন পুলিশ কর্মীও জখম হয়েছেন। জনতার তাণ্ডব চলে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। তার পর বিভিন্ন থানা থেকে প্রচুর পুলিশ আনা হয়। এ বার পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়। পরে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ছোড়া হয় রাবার বুলেট। এরপর পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। অভিযোগ এরপর পুলিশ গ্রামের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুরের পাশাপাশি মারধরও করে। ২০ জনকে আটক করা হয়। বেলা দু’টো নাগাদ উদ্ধার কাজে গতি আসে। সকালে দু’জন ডুবুরি নামানো হয়েছিল। দুপুরে আরও ছ’জন ডুবুরি নামানো হয়। একই সঙ্গে নৌকা ও স্পিড বোটে গঙ্গায় নজরদারিও চালানো হয়।

জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানান, ১৪ জন নিখোঁজ। এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে। তবে তাঁকে সনাক্ত করা যায়নি। জেলাশাসক অবশ্য কাজে ঢিলেমির অভিযোগ মানতে চাননি। পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘জনতার ইটের ঘায়ে দু’জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের উপর হামলা এবং উদ্ধারের কাজে বাধা দেওয়ার জন্য ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।’’

++++++++++++++++++++++++++++

নিখোঁজ

রামপ্রসাদ বিশ্বাস (৩৬), বৃষ্টি বিশ্বাস (৭), শৌভিক বিশ্বাস (সাড়ে ৩), শান্তিপুর, গড়ের গোপপাড়া লেন। চিরঞ্জিত ঘোষ (২৭) সাহেবডাঙা, শান্তিপুর। সাথী বিশ্বাস (১৩)সাউথ সাইড কলোনি, শান্তিপুর। রিনা হালদার(৯)। নৃসিংহপুর,শান্তিপুর। তরঙ্গ দেবনাথ (৭৮).রঘুনাথপুর, শান্তিপুর। লক্ষ্মী বর্মন (৬) মাতলীপুর, ধাত্রীগ্রাম। সন্ধ্যা মণ্ডল (৪৩)ডৌলা, ধানতলা। কৌশিক বসাক (৪১) ফুলিয়া, শান্তিপুর। কাকলি হালদার(১৯)নৃসিংহপুর, শান্তিপুর। শেফালি মণ্ডল (৬০) অদ্বৈত লেন, শান্তিপুর। মনোরঞ্জন বসাক (৪৬) ফুলিয়া। ইদলি দাস (৪০) কেসি দাস রোড, শান্তিপুর। শ্রীবাস ঘোষ, হবিবপুর, রানাঘাট।

*বছর পঁচিশের এক যুবতীর দেহ মিলেছে। পরিচয় জানা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন