প্রতীকী ছবি।
মাছ ধরতে গেলেই হুমকি দিচ্ছিল লোকগুলো! লম্বা ছুরি দেখিয়ে দাঁতে-দাঁত চেপে শাসানির সুরে বলছিল, ‘খবরদার এ দিকে আসবি না। আসলেই কেটে চরে পুঁতে দেব। কাকপক্ষীতেও জানবে না। বাড়ির লোক বডি খুঁজে পাবে না!’
অচেনা লোকগুলোর হাবভাব দেখে ভয় পেয়েছিলেন জেলে-মাঝিরা। এমন সমস্যায় আগে কখনও পড়তে হয়নি। লোকগুলো নৌকা নিয়ে হঠাৎ-হঠাৎ উদয় হয়। কেমন যেন সন্দেহজনক হাবভাব। ওদের নৌকা থেকে মাঝেমধ্যে পচা গন্ধ আসে। গা গুলিয়ে ওঠে।
বেশ কয়েক মাস আগের কথা। নবদ্বীপ উত্তর প্রান্তের গঙ্গার তীরবর্তী মালো পাড়ার মৎস্যজীবীদের একাংশ স্থানীয় পুরপিতার কাছে গোটা বিষয়টা জানিয়ে সুরাহা চেয়েছিলেন। অবাক হয়েছিলেন পুরপিতাও।
জেলেরা জানিয়েছিলেন, গঙ্গার বুকে জেগে ওঠা নতুন চরে কিছু দিন পর-পরই সন্ধ্যার দিকে কিছু লোক নৌকা নিয়ে আসে। চরে নোকা ভিরিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত নোকায় লম্ফ জ্বালিয়ে কি সব যেন করে। গঙ্গার পাড়ে প্রায়শই হাড়গোড় পড়ে থাকতে দেখেন মৎস্যজীবীরা। হাড়, দেহাংশ ভেসে আসে নদীর জলেও। পুরপিতার থেকে খবর পেয়েই সতর্ক হয়েছিল পুলিশ। বাড়িয়েছিল নজরদারি। কারণ, বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে কঙ্কাল কারবারিদের কাজকর্মের পূর্ব অভিজ্ঞতা পুলিশের ছিল। সেই কাণ্ডের কয়েক জন পলাতককেও পুলিশ খুঁজছিল। পুলিশ খবর আনার জন্য লোক লাগায়। তাতেই জালে পড়েছে মাছ।
মঙ্গলবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে অবৈধ কঙ্কাল পাচারকারী চক্রের লোকজন, বর্ধমানের থেকে তাড়া খেয়ে যারা এখানে এসে ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল। জেরায় ধৃত তাপস পাল ওরফে তাপসা এবং কার্তিক ঘোষ জানিয়েছে, তারা কঙ্কাল সংগ্রহ করত ওড়িশার বালেশ্বর ও তার আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গ থেকে। নিখুঁত কঙ্কাল হলে এক-একটির সর্বোচ্চ দাম মিলত ছ’-হাজার টাকা। মান একটু খারাপ হলে পাঁচ হাজারের আশেপাশে জিনিস বিক্রি হত।