— নিজস্ব চিত্র
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর কিংবা নদিয়ার চর কুর্মিপাড়ায় প্রান্তিক এলাকায় রোদ নিংড়ে সৌর বিদ্যুতেআলোয় ফেরা নতুন নয়। তবে তবে সৌরবিদ্যুতে টোটোর ছুট, না আগে দেখেনি এ রাজ্য।
সৌরশক্তিতেই এখন ভর করে কল্যাণীতে ছুটছে টোটো। বছর কয়েক আগে নদিয়া-মুর্শিদাবাদে চলতে শুরু করে টোটো। দূষণহীন এই যান অনেক যাত্রীকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। এ বার সেই টোটোর ছাদে শোভা পাচ্ছে চকচকে সোলার প্যানেল। যা এক ঝলক দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছেন যাত্রী থেকে পথচারী সকলেই। বেঙ্গালুরুর একটি কোম্পানি বেশ কয়েক বছর ধরে সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে টোটো চালানোর জন্য যন্ত্র তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতে এ ভাবেই বহু টোটো চলছে। সেই তালিকায় আগরতলা, গুয়াহাটির সঙ্গে নামও জুড়ে নিল নদিয়ার কল্যাণী, রানাঘাট ও মুর্শিদাবাদের বহরমপুর।
কল্যাণীর সীমান্ত স্টেশন সংলগ্ন ফার্ম মোড়ে এক কারখানায় সোলারের টোটো চালানোর প্যানেল মিলছে। ওই কারখানার কর্মীরাই প্যানেল টোটোর ছাদে বসানো থেকে শুরু করে অন্য ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। সোলারের মাধ্যমে কী ভাবে চলছে টোটো?
কারখানা মালিক হীরামন হালদার জানাচ্ছেন, প্যানেল সূর্যালোকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। পরে তা কন্ট্রোলারের মাধ্যমে ব্যাটারিকে চার্জ করে। কন্ট্রোলার সব সময়ই কমবেশি হারে ব্যাটারিকে চার্জ করার ফলে ব্যাটারির আয়ু দীর্ঘায়িত হয়।
কল্যাণীর ঘোষপাড়ার বাসিন্দা সুকুমার দাস মাস তিনেক আগে তাঁর টোটোয় সোলার মেশিন বসিয়েছেন। সুকুমার জানাচ্ছেন, আগে মেরেকেটে ৪০ কিলোমিটার পথ যাওয়া যেত। এখন অনায়াসে ৬০ কিলোমিটার পথ যাওয়া যায়। তা ছাড়া উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চিতও থাকে। এর ফলে রাতে বাড়ি ফিরে ইলেকট্রিকের মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ দিলে বেশি সময় লাগে না। অন্তত ৩০ শতাংশ কম সময়েই চার্জ হয়ে যায়। আর এই পুরো ব্যবস্থাটা টোটোর সঙ্গে যুক্ত করতে খরচ হয়েছে মাত্র ১৮-১৯ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিল অনেকটাই সাশ্রয় হয়। বছর ঘুরতে না ঘুরতে খরচের টাকাও উঠে আসে।
কল্যাণী মেন স্টেশনের টোটো স্ট্যান্ডের লুতফর, বিশ্বনাথ-সহ আরও অনেকে এখন ভরসা রাখছেন সৌর শক্তিতে। কারখানা মালিক হীরামন জানান, তাঁর কারখানা থেকে নদিয়া আর মুর্শিদাবাদের প্রায় শতাধিক টোটো মালিক প্যানেল ও কন্ট্রোলার কিনেছেন। রানাঘাটের এক টোটো চালক জানালেন, কোম্পানি তো ২৫ বছরের ওয়ারেন্টি দিচ্ছে। তার মধ্যে কোনও সমস্যা হলে প্যানেল মেরামত করবেন কোম্পানির লোক। প্রয়োজনে বদলেও দেবেন তাঁরা। ফলে অসুবিধা কোথায়? নিঃশব্দে ছুটতে ছুটতে টোটোও যে এ ভাবে সৌর-বিপ্লব করে ফেলবে, কে জানত!