জাতীয় সড়কে বেলাগাম গতি, ছেড়ে রাখা খন্দ আছে ফাঁদ পেতে

পথের বিপদ দাঁড়িয়ে পথেই

কালিকাপ্রসাদ যে গাড়িতে ছিলেন, সেটির চালক কি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন? নাকি, ওভারটেক করার সময়ে দশ চাকার ট্রেলার টোকা দিয়ে গিয়েছিল? নাকি, মঙ্গলবার রাতে সুতিতে ধলোর কাছে লরির পিছনে ঢুকে গেল যে মোটরবাইক, তিনটি ছেলে মারা গেল বেঘোরে, দোষ কি লরির?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৭ ০২:৪২
Share:

কালিকাপ্রসাদ যে গাড়িতে ছিলেন, সেটির চালক কি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন? নাকি, ওভারটেক করার সময়ে দশ চাকার ট্রেলার টোকা দিয়ে গিয়েছিল?

Advertisement

নাকি, মঙ্গলবার রাতে সুতিতে ধলোর কাছে লরির পিছনে ঢুকে গেল যে মোটরবাইক, তিনটি ছেলে মারা গেল বেঘোরে, দোষ কি লরির? নাকি তারা বেলাগাম উড়ছিল হাওয়ায়?

আলাদা দু’টো জাতীয় সড়ক। কিন্তু পরিণতি একই— অকালমৃত্যু।

Advertisement

কলকাতা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে যেতে নীচ থেকে পরপর নদিয়া আর মুর্শিদাবাদকে ফুঁড়ে গিয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। বহু টানাপড়েনের পরে চার লেন হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা, কাজ চলছে এখনও।

কিন্তু নিরাপত্তার হাল কী?

অভিজ্ঞতা বলছে, কোথাও বেহাল রাস্তা সাক্ষাৎ মৃত্যু হয়ে ঘাপটি মেরে রয়েছে, তো কোথাও মসৃণ পিচঢালা রাস্তায় বেলাগাম গতি ডাকছে বিপদ। বেপরোয়া মোটরবাইক, হেলমেট-বিহীন সওয়ারি, যানজটে হাঁসফাঁস সড়ক, লেন ভেঙে শর্টকাট, ঊর্ধ্বশ্বাস ওভারটেক— কত পুরনো রোগ আর কত যে নতুন উপসর্গ।

হিসেবে বলছে, শুধু নদিয়ায় গত সেপ্টেম্বর থেকে এই মঙ্গলবার পর্যন্ত কারও না কারও মৃত্যু হয়েছে এমন দুর্ঘটনার সংখ্যা ৭৫। প্রাণ গিয়েছে ৯৫ জনের। এর বাইরে আরও ৭৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, জখম ১২৮ জন। শুধু গত আট দিনেই মারা গিয়েছেন ৮ জন। মুর্শিদাবাদে বিপর্যয়ের সংখ্যা খানিক কম। গত ছ’মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৮টি। মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। তার মধ্যে গত আড়াই মাসে ১৩ জন। আহতের সংখ্যা ১১২।

পুলিশের মাথাব্যথার একটা কারণ যদি বেপরোয়া বাইক হয়, দুর্ঘটনার আর একটি বড় কারণ গত আট বছর ধরে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ নিয়ে টালবাহানা। বছর দুয়েক আগে কাজ শুরু হলেও জমি-জটে বেশ কয়েক জায়গায় কাজ এখনও আটকে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কৃষ্ণনগর ইউনিট অধিকর্তা সুগত সাহা বলেন, “রাস্তার পাশের জমি বা সোল্ডার উঁচু করার কাজ চলছে।’’ ফলে নদিয়ার জাগুলি থেকে শুরু করে বেশ কিছু জায়গায় এখনও রাস্তার ধারে গভীর ক্ষত। রাস্তা উঁচু হয়েছে, পাশের মাটি ভরাট হয়নি। অন্য গাড়িকে জায়গা দিতে গিয়ে উল্টে যাচ্ছে গাড়ি।

ও দিকে, বেলডাঙা ছাড়িয়ে ভাবতা বাজারের কাছে ৬০০ মিটার রাস্তা পুরো ভেঙে গিয়েছে। প্রায় সব গাড়িই পাশের লেন দিয়ে যাতায়াত করছে। তার জেরে ছোট-বড় দুর্ঘটনা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদেও অনেক জায়গায় রাস্তা থেকে ফুটপাথের দূরত্ব অনেক। বাইক বা ছোট গাড়ি অন্য গাড়িকে জায়গা দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে।

পুলিশের বক্তব্য, জাতীয় সড়কের সঙ্গে সংযোগকারী বিভিন্ন রাস্তার দু’পাশে বাড়ি বা দোকান থাকায় কোনও দিক থেকেই উল্টো দিকের গাড়ি চোখে পড়ে না। বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে ওই সব জায়গায়। গাড়ির গতিতে লাগাম পরানোর ব্যবস্থাও এখনও প্রায় কিছুই হয়নি। বিপদসঙ্কুল পাহাড়ি রাস্তায় এক-দেড়শো মিটার অন্তর এমন ব্যবস্থা থাকে যে, চালককে বাধ্য হয়ে সতর্ক হতে হয়। জাতীয় সড়কেও তেমন ব্যবস্থা চালু করা যায় না?

প্রশ্ন হল, বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবে কে?

মরণ-কথা

১৯ জানুয়ারি, তারাপুর (সমশেরগঞ্জ) মোটরবাইক ও লরির সংঘর্ষ, মৃত ২

কারণ: তীব্রগতিতে ওভারটেক

৭ মার্চ,ধলো (সুতি)

সামনের লরিতে ধাক্কা মোটরবাইকের, মৃত ২

কারণ: মত্ত সওয়ারি, বেলাগাম গতি

১৮ জানুয়ারি, গদাইপুর (সুতি)

সড়কের রেলিংয়ে মোটরবাইকের ধাক্কা, মৃত ২

কারণ: বেলাগাম গতি

বিপদ ওত পেতে

• জাগুলি মোড়: ব্যস্ত চৌমাথা


চাকদহ মোড়: যানজট লেগে থাকে


রানাঘাট প্রামানিক মোড়: শহরের ইন্যতম ব্যস্ত জায়গা,

• শান্তিপুর: শহরের মাঝ দিয়ে রাস্তা


বেথুয়াডহরি: বিভিন্ন দিক থেকে রাস্তা এসে মিশেছে


বেলডাঙা ভাবতা মোড়: রাস্তা ভাঙা


বহরমপুর পঞ্চাননতলা: রাস্তার পাশে পার্কিং


বহরমপুর গির্জা মোড়: অন্যতম ব্যস্ত এলাকা


রঘুনাথগঞ্জ উমরপুর: চার মাথার মোড় ভুল জায়গায়


সুতির গদাইপুর ও আহিরণ, ফরাক্কার বল্লালপুর: বিপজ্জনক বাঁক: বিপজ্জনক বাঁক


ফরাক্কা এনটিপিসি মোড়: নানা রাস্তা মিশেছে

১৪ জানুয়ারি,বেথুয়াডহরি

লরি-ম্যাটাডোরে ধাক্কা, মৃত ৯

কারণ: চালক মদ্যপ, অতিরিক্ত গতি

১৭ মার্চ, উদয়পুর, শান্তিপুর

লরি-গাড়ি সংঘর্ষ, মৃত ২

কারণ: ওভারটেক

২৮ ফেব্রুয়ারি, কুগাছি (চাকদহ) রাস্তার ধারে খালে ম্যাটাডোর। মৃত ৬

কারণ: রাস্তার থেকে ফুটপাত অনেক নীচে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন