Independence Day Special

অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন মা

গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে বাবলা নদী। তৎকালীন বর্ধমান জেলার কাটোয়া থেকে নৌকা নিয়ে সরসরি আমাদের বাড়িতে আসতেন বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী।

Advertisement

আব্দুর রফিক শেখ

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৪৩
Share:

রাহিলা খাতুনের ছেলে ksahaabp@gmail.com

আদতে বেলডাঙা থানা এলাকার ঝুনকা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন আমার মা রাহিলা খাতুন। আনুমানিক ১৯৩০ সালে সালারের স্বরমস্তপুর গ্রামের আব্দুল খলিলের সঙ্গে বিয়ে হয়। তারপর থেকেই স্বরমস্তপুরের বাসিন্দা হন। বিয়ের পরেই তিনি জানতে পারেন, তাঁর স্বামী এক জন স্বাধীনতা সংগ্রামী। শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন না, স্বামী ছিলেন আঞ্চলিক অনুশীলন সমিতির সম্পাদক। ১৯৩৫ সালে স্বামীর অনুমতিতে নিজেও ওই অনুশীলন সমিতির মহিলা সদস্য হন আমার মা। সেই কারণে সারা দেশ থেকে অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী আমাদের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে দেখা করতেও আসতেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজনও মাকে সম্পূর্ণ ভাবে দেশ স্বাধীন করার কাজে সমর্থন করেছিলেন। অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী আমাদের বাড়িতে আসতেন। আমি তখন খুব ছোট। পরে মায়ের কাছে শুনেছি সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বেনামে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হত মাকে।

Advertisement

আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে বাবলা নদী। তৎকালীন বর্ধমান জেলার কাটোয়া থেকে নৌকা নিয়ে সরসরি আমাদের বাড়িতে আসতেন বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী। সুবোধ চৌধুরী, বহরমপুরের সনৎ রাহাদের মতো সংগ্রামীরা। আসতেন সরোজ কুমার রায়চৌধুরীদের মতো মানুষরা। গ্রামের বাসিন্দারের খোঁজখবরের বিষয়েও মাকে সামাল দিতে হয়েছে। তবে আমার বাবা আব্দুল খলিল বেশি দূর পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারেননি। পাশের গ্রাম তালিবপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও ইংরেজিতে দখল ছিল খুব ভাল। আর মা সাক্ষর হয়েছিলেন, সেটাও আবার কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের তৎকালীন ইতিহাস বিভাগের দায়িত্বে থাকা শান্তিময় রায়ের হাত ধরে। বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে হুগলি এলাকার কংগ্রেসের দায়িত্ব সামাল দিয়েছেন। এ দিকটা সামাল দিতেন মা।

মা বলতেন আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাবলা নদীর ধারে কয়েক একর জায়গা জুড়ে ঘন জঙ্গল ছিল। ওই জঙ্গলের মাঝামাঝি এলাকায় স্বাধীনতা সংগ্রামীরা আসতেন। বাড়ি থেকে মা তাঁদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতেন এবং ঘন জঙ্গলের মধ্যে বৈঠকেও যোগ দিতেন।

Advertisement

শুনেছি, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বাবা ও মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। সুভাষচন্দ্র বসু বেশ কয়েক বার আমাদের জেলাতে এসেছিলেন। তার মধ্যে একবার আমার মা বাবা নেতাজীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট যেদিন দেশ স্বাধীন হল সেদিন মায়ের নেতৃত্বে স্বরমস্তপুর গ্রামে আমাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার পাশাপাশি সারা গ্রাম পরিদর্শন করা হয়েছিল। সেখানে সরোজকুমার রায়চৌধুরী একটি গান গেয়েছিলেন যেটা আজও আমার কানে বাজে “আমরা সকলে ভারত মাতার ছেলে, মা মা বলে কত ডেকেছি ভাই...।” প্রত্যেক বার ১৫ অগস্ট মা পতাকা উত্তোলন করতেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন