রাস্তা সারাইয়ের ফাঁকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলার ছেলে

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য, দেশ ছাড়িয়ে এবার বিদেশের মাটিতে লড়াই করতে চলেছেন রানাঘাট থানার হবিবপুরের বাসিন্দা বছর ত্রিশ বয়েসের সোনু কৈরি। আগামী ১০-১৪ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সাইকেল পোলোর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

হবিবপুর শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১০
Share:

প্র্যাকটিসে সোনু কৈরি। নিজস্ব চিত্র

আর্থিক অনটনের বিরুদ্ধে মরিয়া লড়াই। পেট চালাতে রোলার চালাতে হয় রাস্তায়। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ছাড়তে হয়েছে পড়াশোনার পাট। তবে ভাগ্যের চাকা ঘুরল মল্লিকদের বাগানবাড়িতে শুভেন্দু মল্লিকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর। তাঁর কাছে সাইকেল পোলো শেখার পর আর পিছনে তাকাতে হয়নি রানাঘাট থানার হবিবপুরের বাসিন্দা সোনু কৈরীকে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য, দেশ ছাড়িয়ে এবার বিদেশের মাটিতে লড়াই করতে চলেছেন রানাঘাট থানার হবিবপুরের বাসিন্দা বছর ত্রিশ বয়েসের সোনু কৈরি। আগামী ১০-১৪ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সাইকেল পোলোর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে ভারতের হয়ে খেলবেন সোনু। এ জন্য দিল্লিতে হবে কোচিং ক্যাম্প। সোনু এখন কোচিং ক্যাম্পে রয়েছেন।

সেখান থেকে তিনি বলেন, ‘‘এই প্রথম বিদেশের মাটিতে খেলতে যাচ্ছি। এর আগে ২০১৭ সালে একবার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু শেষে দলে জায়গা পাইনি। এবার আটজনের দলে সুযোগ পেয়েছি। দেশের সম্মানের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।” পাশাপাশি তিনি জানান, সাইকেল এবং পোলোর স্টিক দিয়েছেন। তা নিয়েই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি।

Advertisement

তবে আর্থিক অনটনের কারণে এখনও মাঝে মাঝে রাস্তায় রোলার চালাতে হয় তাঁকে। এর আগে সাতবার ভারত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ দিয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

১২০ মিটার লম্বা এবং ৮০ মিটার চওড়া মাঠে এই খেলা হয়। দু’দিকে চার মিটারের ব্যবধানে দুটি বার থাকে। তবে এখানে কোনও ক্রস বার থাকে ন। সাইকেলে চড়ে স্টিক দিয়ে বলে আঘাত করে গোল দিতে হয়। উভয় পক্ষের চারজন করে এই খেলায় যোগ দেন। সাড়ে সাত মিনিট করে চারবার এই খেলা হয়। শেষে কাদের পক্ষে ক’টা গোল হল, তার উপর ভিত্তি করেই জয়ীকে নির্বাচন করা হয়।

রানাঘাট ১ নম্বর ব্লকের হবিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ছাতিমতলায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বাড়ি সোনুদের। তাঁরা তিন ভাই এবং দুই বোন। সোনুর দাদা মুন্না কৈরি বলেন, “মল্লিকদের বাগানবাড়িতে এলাকার ছেলেমেয়েরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মল্লিকরাই সব ধরনের সাহায্য করে থাকেন। আমি নিজেও ওই মাঠে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রায় ১৫ বছর লড়াই করে ভাই ওই জায়গায় পৌঁছেছে। আশা করছি ওরা সুখবর নিয়ে দেশে ফিরবে।”

মল্লিকদের বাগানবাড়ির মাঠে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। জানা গেল, সেখানে মোট ৪৮ জন প্রশিক্ষণ নেন। শিক্ষার্থীদের বয়স ৭ থেকে ৩৩ বছরের মধ্যে। সাইকেল থামিয়ে বিকাশ বিন, টিঙ্কু ঘোষ, সুভেদ বিন জানান, প্রথমে মাঠে দৌড়তে হয়। পরে ব্যায়াম করতে হয়। শেষে সাইকেলে চেপে খেলতে হয়। এক খেলোয়াড় বলেন, ‘‘সোনু আমাদের গর্ব। ও বিদেশের মাটিতে খেলতে গিয়েছে। ওকে দেখে আমরাও উৎসাহ পাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন