ঝড় উঠতে দেখে বাড়ির দরজা জালানা বন্ধ করে চুপ করে ঘাটের উপরে বসেছিলেন বছর ষাটেকের বৃদ্ধা মঙ্গলা মণ্ডল। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় ঘরের টিনের ছাদ উড়ে গেল। ধুলোবালিতে ভরে গেল চারপাশ! সম্বিত ফিরতে না ফিরতে নেম এল বৃষ্টি। একা হাতে বাড়ির আসবাসপত্র কত আর সামলাবেন। আর বৃষ্টি থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন বা কোথায়।
দাওয়ায় বসে বুধবার রাতের ঝড়ের তাণ্ডবের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বার বার এই কথাগুলো আওড়াচ্ছিলেন। তবে শুধু মঙ্গলাদেবী নন, এমন অভিজ্ঞতা চাকদহের মলিচাগড়ের বহু বাসিন্দারই।
শিমুরালি রেলস্টেশন থেকে দু’কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চান্দুরিয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মলিচাগড়। বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায় বেশ কয়েকটি বাড়ির চাল ঝড়ে উড়ে গিয়েছে। নারকেল গাছ ভেঙে পড়েছে মুরগির খামারের উপর। গাছের ডাল ভেঙে পড়ায় ছিঁড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের তার। কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটিও ভেঙে পড়েছে। মুড়ি-মুড়কির মতো আম ঝরে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমচাষিরা। স্থানীয় বাসিন্দা রবকুল মণ্ডল, আকবর বিশ্বাসরা বলেন, ‘‘তখন রাত সাড়ে ৮টা বাজে। হঠাৎ ঝড় উঠল। মিনিট কয়েক ঝড়। তাতেই এই অবস্থা। এর আগে এ ধরনের ঝড়ে এতো ক্ষতি হতে দেখিনি।’’
গৃহবধূ ফরিদা মণ্ডল বলেন,” আমার দুই ছেলে তখন ঘরের মধ্যে ছিল। ঝড় উঠছে দেখে তাদেরকে নিয়ে বারান্দায় বেরিয়ে আসি। মুহূর্তের মধ্যে টিনের চাল উড়ে যায়। বেশ কয়েকটা ইট এসে পড়ে বিছানার উপর। ভাগ্যিস ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম। তা না হলে যে কী হত তা জানি না।’’ আরও এক বাসিন্দা দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘গোটা চারেক আম বাগান লিজে নিয়েছিলাম। ফলনও ভাল হয়েছিল। কিন্তু ঝড়ে সব শেষ হয়ে গিয়েছে।’’
খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান চাকদহের বিডিও বিপ্লব সরকার। তিনি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে পাঠানোর জন্য বলেছি। তাঁদেরকে ত্রাণ দেওয়ার বিষয়ে কথাবার্তা চলছে।’’ বিপিএল তালিকা থাকা দু’টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এ দিকে, ঝড়ে শিয়ালদহ-রানাঘাট শাখার শিমুরালি ও মদনপুর রেলস্টেশনের মাঝে আপ লাইনে গাছ পড়ে ওভারহেডের তার ছিড়ে গেলে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হত। গভীর রাতে গাছ কেটে সরানোর হলে তবেই ট্রেন চলাচল শুরু হয়।