প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ হোগলবেড়িয়ার স্কুলে

স্কুলের টাকা নয়ছয়, পড়ুয়াদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের মতো বেশ কিছু অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষককে প্রায় চার ঘণ্টা তালাবন্দি করে বিক্ষোভ দেখাল পড়ুয়ারা। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে করিমপুর ১ ব্লকের হোগলবেড়িয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমপুর শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:৫৩
Share:

আটকে দেওয়া হয়েছে স্কুলের গেট। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।

স্কুলের টাকা নয়ছয়, পড়ুয়াদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের মতো বেশ কিছু অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষককে প্রায় চার ঘণ্টা তালাবন্দি করে বিক্ষোভ দেখাল পড়ুয়ারা। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে করিমপুর ১ ব্লকের হোগলবেড়িয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতনে। পরে বিডিও ও পুলিশের আশ্বাসে বিকেল চারটে নাগাদ বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়।

Advertisement

প্রশাসন ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন ধরেই প্রধান শিক্ষক বিমল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠছিল। বিষয়টি স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্যদেরও নজরে আসে। সেই ঘটনার কথা জানতে পারেন অভিভাবক ও স্কুলের পড়ুয়ারা। তখন থেকেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমছিল। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে মঙ্গলবার। এ দিন স্কুলের প্রথম পিরিয়ডের পরে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তালা দিয়ে দেওয়া হয় স্কুলের গেটেও। শিকেয় ওঠে স্কুলের পঠনপাঠন।

স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি সনৎ মণ্ডলের অভিযোগ, কয়েক মাস আগে স্কুলে প্রায় দু’লক্ষ টাকা এসেছে। সেই টাকায় গবেষণাগারের সরঞ্জাম কেনা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষককে বলা হয় প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা তৈরি করতে। এ দিকে, গত বছরের গবেষণাগারের সরঞ্জাম কেনার জন্য পাওয়া নয় লক্ষ সত্তর হাজার টাকার কোনও হিসেব দিতে পারেননি বিমলবাবু। সনৎবাবু বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক পরে সাফাই দেন যে, তিনি মাত্র মাত্র ছয় লক্ষ পচানব্বই হাজার টাকার সরঞ্জাম পেয়েছেন। কিন্তু গবেষণাগারের জন্য যে সামগ্রী এসেছে তার দাম কোনও ভাবেই সাড়ে তিন লক্ষ টাকার বেশি হবে না।” পরিচালন সমিতির সদস্য সুমিত মণ্ডল বলেন, “মিড ডে মিলের হাজার হাজার টাকা তিনি নয়ছয় করেছেন। আমরা বারবার বলেও তিনি কোনও হিসেব দেননি। বিষয়টি আমরা ধরে ফেলার পরে বিমলবাবু দশ লক্ষ টাকা দিয়ে মিটিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তাঁর অসৎ প্রস্তাবে রাজি হইনি।’’ সুমিতবাবুর ও অভিযোগ, স্কুলের অনেক টাকা বেআইনি ভাবে প্রধান শিক্ষক তাঁর নিজস্ব অ্যাকাউন্টে রেখেছেন। সে বিষয়েও তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গেও তিনি খুব খারাপ ব্যবহার করেন। বিমলবাবুর উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেন সুমিতবাবু।

Advertisement

পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, ছাত্র ছাত্রীরা কোনও শংসাপত্র নিতে এলেও প্রধান শিক্ষকের প্রশ্রয়ে স্কুলের এক করণিক নগদ টাকা নেন। প্রায়ই স্কুল থেকে পড়ুয়াদের সাইকেল হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রধান শিক্ষক এ সব ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেন না। এ দিন বিডিওকে পেয়ে পড়ুয়ারা এমন বহু অভিযোগ জানিয়েছে। পড়ুয়াদের এমন অভিযোগ মেনে নিয়েছেন শিক্ষকদের একাংশ। তাঁরা জানান, প্রধান শিক্ষকের একের পর এক ভুলের জন্য আজ এমন ঘটল। দিনভর বিশৃঙ্খলায় শিকেয় ওঠে পড়াশোনা।

তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক বিমল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমি সব হিসেব পরিচালন সমিতির সদস্যদের দিতে চেয়েছি। ঠিকাদার এখনও গবেষণাগারের সরঞ্জাম দেয়নি। যেগুলি দিয়েছে তার কোনও ভাউচারও আমাকে ওঁরা দেননি।” করিমপুর ১ বিডিও তাপস মুখোপাধ্যায় বলেন, “আর্থিক দুর্নীতি-সহ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। আমি তাঁদের সবাইকে বলেছি অভিযোগ লিখিত ভাবে আমার কাছে জমা দিতে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন