আমার ঠিক আগে সাইকেল নিয়ে হেঁটে নিউ ফরাক্কা মোড় পেরোচ্ছিল ক্লাস ইলেভেনের রুম্পা। আমি বড় জোর হাত দশেক পিছনে। একটু বাদেই পরীক্ষা শুরু হবে।
রুম্পা গরিব ঘরের মেয়ে। বাবা বীরেন হালদারের চায়ের দোকান। নিশিন্দ্রা প্রাথমিক স্কুলের কাছে ওদের বাড়ি। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে রুম্পাই ছোট। ওর খুব ইচ্ছে ছিল, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ফরাক্কা কলেজে ভর্তি হওয়ার।
ধুলিয়ানের দিকে যাওয়া লরিটা মোড় পেরোনোর সময়ে হঠাৎই একটু বেঁকে এসে রুম্পার সাইকেলে ধাক্কা মারল। আর ও ছিটকে লরির চাকার নীচে পড়ে গেল। আমার চোখের সামনেই লহমায় ঘটে গেল ঘটনাটা। ছুটে গিয়ে দেখি, সব শেষ।
লরির ধাক্কায় ছিটকে পড়ল সাইকেল। পিষে গেল ছাত্রী। রাস্তা অবরোধ করে শুরু হল তাণ্ডব, বাসে-লরিতে আগুন দেওয়া।
খবর পেয়ে স্কুল থেকে শিক্ষকেরা ছুটে এলেন, ছাত্রেরাও। সকলেই খুব উত্তেজিত। আমি সকলকে শান্ত করি। কিন্তু ততক্ষণে কয়েকশো স্থানীয় যুবক রাস্তায় নেমে পড়েছে। হাতে লাঠি, লোহার রড। আমি যখন ছাত্রদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছি, এক দল যুবক সামনে এসে শাসাল, ‘চলে যান এখান থেকে! কিছুতেই মৃতদেহ তুলতে দেব না।’ সঙ্গে গালিগালাজ। তাদের উস্কানিতে তখন লাফাচ্ছে কিছু অবুঝ ছাত্র। কে যেন বলল, ‘লাগিয়ে দে আগুন।’ আর ওখানে থাকিনি। তাণ্ডব চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।