পরিচালন সমিতির সদস্যদের অন্তর্দ্বন্দ্বে পোশাক ও উৎসাহ ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কয়েক হাজার পড়ুয়া। মে মাস থেকে পড়ুয়াদের পোশাক বাবদ ব্যাঙ্কে পড়ে রয়েছে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা। এই টাকা পাওয়ার কথা ৩৫৫৬ জন পড়ুয়ার। একই ভাবে ৬০২ জন ছাত্রীর প্রাপ্য ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা উৎসাহ ভাতা পড়ে রয়েছে।
অভিযোগ, মাস ছ’য়েক কেটে গেলেও পড়ুয়াদের বকেয়া টাকা বিতরণের ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপই করছেন না জঙ্গিপুরের ভাসাই পাইকর হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও এক বছর ধরে ওই স্কুলে মিড ডে মিলের হাঁড়ি চড়েনি। অথচ মিড ডে মিল বাবদ ব্যাঙ্কে পড়ে রয়েছে ৩.৮০ লক্ষ টাকা। মিড ডে বন্ধ থাকায় কমছে প়ড়ুয়াদের উপস্থিতি। কেন এই অবস্থা? স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে পূর্বতন প্রধান শিক্ষক মিড ডে মিলের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে গ্রেফতার হন। পরে তিনি অবসরও নেন। পরিচালন সমিতির ১৩ জন সদস্যের মধ্যে ৬ জনের সদস্যপদ খারিজ হয়েছে। তারপর স্কুলের তরফে ব্যাঙ্কে টাকা লেনদেনের বিষয়টি কারা দেখভাল করবেন, এ নিয়ে কোনও ঐক্যমত তৈরি হয়নি। জুলাই মাসে এ ব্যাপারে পরিচালন সমিতির সভা ডাকা হয়। কিন্তু সদস্যদের অর্ন্তবিবাদে তা ভেস্তে যায়। তারপর থেকে আর সভা ডাকা হয়নি। ফলে টাকা পড়ে রয়েছে ব্যাঙ্কেই। সেই টাকা পড়ুয়াদের মধ্যে বিতরণ করা যাচ্ছে না।
সদ্য বিদায়ী পরিচালন সমিতির সদস্য আব্দুল খালেক বলেন, ‘‘ছয় মাস কেটে গেলেও বর্তমান পরিচালন সমিতি কারা ব্যাঙ্কে টাকা লেনদেনের কাজ করবেন, তা ঠিক করতে পারেনি। ফলে এই অচলাবস্থা।’’ পরিচালন সমিতির সম্পাদক হুমায়ুন আলি বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করেও স্কুলের তরফে কারা ব্যাঙ্কের কাজ করবেন, তা স্থির করতে পারা যায়নি। ফলে টাকাও তোলা যাচ্ছে না। আর মিড ডে মিলের বিষয়টি প্রশাসন বলতে পারবে।’’
পরিচালন সমিতির সদস্যদের নিজেদের বিবাদে সমস্যায় পড়েছে প়ড়ুয়ারা। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী টুম্পা সরকারের পোশাক ও উৎসাহ ভাতা বাবদ বকেয়া রয়েছে ১৩০০ টাকা। পঞ্চম শ্রেণির রোজিনা খাতুন, মাম্পি মণ্ডলরাও পায়নি প্রাপ্য টাকা। ফলে উৎসবের মাসে তারা নতুন পোশাক কিনতে পারছে না। মিড ডে মিল না পেয়ে স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, এমনটাই দাবি স্কুলের পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত একাংশের। সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক (জঙ্গিপুর) পঙ্কজ পাল বলেন, ‘‘কারা ব্যাঙ্কের কাজকর্ম পরিচালনা করবেন, তা স্থির করতে পারছে না। কেন এটা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে সমিতি ভেঙে প্রশাসক বসানো হবে। পড়ুয়াদের আর্থিক বঞ্চনা মানা যায় না। শিক্ষকদের ছুটি হিসেব সংক্রান্ত ফাইলও চেয়ে পাঠিয়েছি।’’