এক কথায় সে রাতে নতুন জীবন পেয়েছিল ছেলেটা।
রক্তের অভাবে মরতে বসেছিল একরত্তি ছেলেটা। অনেক চেষ্টাচরিত্র করে তার বাবা রক্ত জোগাড় করে এনে ছিলেন। সে যাত্রায় প্রাণ বেঁচেছিল তার। বড় হয়েও সেই রাতের কথা ভুলে যায়নি সে। তাই আঠেরো ছোঁয়ার জন্মদিন অন্য ভাবে পালন করল কৃষ্ণনগরের ময়ূখ দত্ত।
রবিবার নিজের বাড়িতেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিলেন তার বাবা সুব্রতনারায়ণ দত্ত। সেই শিবিরে প্রথম রক্তদান করল ময়ূখ নিজে। এমন জন্মদিন পালনে পাশে থাকলেন প্রতিবেশীরা। তাঁদের সঙ্গেই রক্ত দান করলেন আত্মীয় এবং আমন্ত্রিতেরাও। উপস্থিত থাকলেন শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার। সুব্রতবাবু পেশায় শক্তিনগর হাইস্কুলের শিক্ষক। বাড়ি কৃষ্ণনগরের নেদেরপাড়ায়। একমাত্র ছেলে ময়ূখ কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। রবিবার সে ১৮ বছরে পা দিল।
এ বারও বন্ধুবান্ধব ডেকে ছেলের জন্মদিন পালনের উদ্যোগ নিচ্ছিলেন সুব্রতনারায়ণবাবু। তখনই প্রস্তবটা দেয় ময়ূখ। তার কথায়, “আমি নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছি, রক্ত কতটা মূল্যবান। সেই, রাতে বাবা রক্তের ব্যবস্থা করতে না পারলে আজকের জন্মদিনটাই চো আসত না। এক অর্থে আমার নতুন জীবনও সে রাতে পেয়েছিলাম বলতে পারেন।’’
রক্ত দেওয়ার পরিকল্পনা কীভাবে মাথায় এল? তার কথায়, “মায়ের মুখ থেকে যে দিন আমি প্রথম ঘটনাটা জানতে পারি, সেদিনই ঠিক করে ফেলেছিলাম, ১৮ বছরের জন্মদিন রক্ত দান করব।” সেই মত যোগাযোগ করা হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ওই দিন অন্য জায়গায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন আগে থেকে ছিল ব্লাড ব্যাঙ্কের। গোটা বিষয়টি জানতে পারেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুপার শচীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ। ব্যতিক্রমীও বলা চলে। সেই কারণে আমরাও চেয়েছিলাম রক্তদান শিবিরটা হোক।” এ দিন রক্ত দেয়, ময়ূখের সহপাঠী অয়নজিৎ সেন। তার কথায়, “আমার পিসির ক্যানসার। তার রক্তের প্রয়োজন। আমাদেরকেও অনেক কষ্ট করে রক্ত সংগ্রহ করতে হয়। তাই রক্তদানের কথা শুনে এগিয়ে আসি।” ময়ূখের মা তনু মজুমদার দত্ত বলেছেন, “প্রতি বারই জন্মদিন পালন করি। কিন্তু এ বারের আনন্দটা একবারে অন্যরকম।”