পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে ঘিরে ধরে গুলি

তিনি তাদের অনুরোধ করেন, “আমাকে মারিস না। আমাকে মেরে তোদের কিছু হবে না।”

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪২
Share:

প্রশান্ত সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

সকাল সাড়ে ৯টা।

Advertisement

আর পাঁচটা দিনের মতো কর্মব্যস্ত কৃষ্ণনগর। বাড়ি থেকে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সাইকেল চালিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে চলেছেন বছর কুড়ির এক যুবক। সিএমএস স্কুলের কাছে আরশিপাড়ার রাস্তায় ঢালের মুখে আচমকা তাঁকে ঘিরে ধরলেন জনা কয়েক যুবক। এক জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। তা দেখে চমকে গেলেন সাইকেল সাইকেল আরোহী। তিনি তাদের অনুরোধ করেন, “আমাকে মারিস না। আমাকে মেরে তোদের কিছু হবে না।”

সেই অনুরোধে সাড়া মেলেনি। পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলিটা চালিয়ে দিলেন একজন। রাস্তায় লুটিয়ে পড়লেন বছর কুড়ির ওই যুবক— প্রশান্ত সরকার। এসএফআই-এর জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক।

Advertisement

গুলির শব্দে চমকে উঠেছিলেন এলাকার লোকজন। ‘দুষ্কৃতী’রা তত ক্ষণে পগারপার। প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে ছুটে এলেন স্থানীয় লোকজন। ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে জেলা সদর হাসপাতাল। ধরাধরি করে প্রশান্তকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি তাঁকে।

সালটা ছিল ১৯৭০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। কৃষ্ণনগর শহর তখন নকশাল প্রভাবিত। পরীক্ষা বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। তার বিরোধিতা করছে এসএফআই। তারা চায় পরীক্ষা হোক। প্রশান্ত সরকার তখন বিপিসিআইটি কলেজের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছেন। তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা দিতে গেলে তাঁকে যে খুন করা হতে পারে সে খবর পেয়েছিলেন দলের নেতারা। রাতে তাঁকে ডেকে নেতারা বারণ করেছেন, পরীক্ষা না দিতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু প্রশান্তের একটাই কথা, “আমরা ছাত্রদের পরীক্ষা দিতে আসার জন্য আহ্বান করেছি। আর আমি নিজে যাব না তা হয় নাকি!”

প্রশান্ত ছিল বিনয়কৃষ্ণ সরকারের চতুর্থ সন্তান। প্রশান্তের দাদা প্রদ্যুৎ সরকারের বয়স এখন বাহাত্তর বছর। এত দিন পরেও তাঁর স্পষ্ট মনে পড়ে সে দিনের কথা। তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুর সম্ভবনা জেনেও আদর্শের সঙ্গে সমঝোতা করেনি দাদা। সকালে গরম ভাত খেয়ে প্রিয় সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল। আর ফিরল না।’’ তিনি জানান, নেতাদের কাছে ঠিক তথ্যই ছিল। মাঝ পথে প্রশান্তকে আটকানো হয়। পরীক্ষা না দিতে না যাওয়ার জন্য বারণ করা হয়। কিন্তু প্রশান্তও নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। পরীক্ষা তিনি দেবেনই। পরীক্ষা অবশ্য তাঁর আর দেওয়া হয়নি। গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন। রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল রাজপথ।

সে দিন বিকেলে তাঁর দেহ নিয়ে শহরে বার হয় মিছিল। কয়েকশো মানুষ তাতে যোগ দিয়েছিলেন।

মৃত্যুর আগে প্রশান্ত পুলিশের কাছে অভিযুক্তদের কয়েক জনের নাম জানিয়েছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকেই এলাকায় নকশাল নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যাঁদের অনেকে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন। কেউ ফেরার। প্রদ্যুৎ আক্ষেপ করে বলেন, “সে দিন ভয়ে-আতঙ্কে আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে পর্যন্ত পারিনি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তবে ওদের শাস্তি ওরা পেয়েছে। পুলিশের গুলিতে মরেছে সেই নকশাল নেতাদের কেউ কেউ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন