ডিজে দানবের দৌরাত্ম্য, লাটে উঠেছে পড়াশোনা

ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও রেহাই মিলল না। এক পরীক্ষার্থীর কথায়, ‘‘আওয়াজে কী করে পড়ি বলুন তো? গত কয়েক দিন ধরে এমনটাই চলছে।’’ ১৫ নভেম্বর উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট, ২০ নভেম্বর থেকে মাধ্যমিকের টেস্ট শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১৯
Share:

অবাধে ডিজে। নিজস্ব চিত্র

পুজো-পার্বণ-পিকনিক, যাই হোক না কেন, লিস্টির প্রথমেই থাকে ডিজে!

Advertisement

আর সেই পিলে চমকানো ডিজের দাপটে নাজেহাল শহর। শীত পড়তেই শুরু হয়েছে মেলা, জলসা। সামনে রয়েছে বিচিত্রানুষ্ঠান বা নাইট উৎসব।

খাতায়-কলমে ডিজে নিষিদ্ধ করা হলেও বাস্তব বলছে অন্য কথা। শহর তো বটেই, নদিয়া মুর্শিদাবাদের গাঁ-গঞ্জেও সমানে বাজছে ডিজে। রবিবার দুপুরে বহরমপুরের মাধ্যমিকের এক টেস্ট পরীক্ষার্থী আঁক কষতে বসেছিল। সোমবার অঙ্ক পরীক্ষা। ঠিক তখনই ভৈরব পুজোর শোভাযাত্রায় ব্যান্ড পার্টির পাশাপাশি ডিজের গুঁতোয় একটা অঙ্কও মিলল না।

Advertisement

ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও রেহাই মিলল না। ওই পরীক্ষার্থীর কথায়, ‘‘আওয়াজে কী করে পড়ি বলুন তো? গত কয়েক দিন ধরে এমনটাই চলছে।’’ ১৫ নভেম্বর উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট, ২০ নভেম্বর থেকে মাধ্যমিকের টেস্ট শুরু হয়েছে।

এ দিকে, পরীক্ষার আগে থেকেই চলছে বিভিন্ন পুজো ও অনুষ্ঠান। বহরমপুর গোরাবাজার আইসিআই-এর প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত দত্ত বলেন, ‘‘আগে যা ছিল এক দিনের পুজো, এখন তা চার দিন ধরে চলছে। পুজোর কয়েক দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডিজে-র আওয়াজে ঘরে শান্তিতে বসে থাকা যাচ্ছে না! ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা চলছে। এটা যেন এখানকার কারও মাথাতেই নেই।’’

কোথাও পুজো উপলক্ষে চলছে সারা দিন ধরে মেলা ও বিচিত্রানুষ্ঠান। গভীর রাত পর্যন্ত বাজছে ডিজে। কিন্তু যাদের রাশ টানার কথা, সেই পুলিশ ও প্রশাসন নির্বিকার বলেই অভিযোগ। বহরমপুরের চুঁয়াপুর বিদ্যানিকেতন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী সেন জানান, চারপাশে শব্দ-দানবের তাণ্ডব চলছে। সকলে ওই আওয়াজে তটস্থ। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের কানে আওয়াজ ঢুকছে না!

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষার পরে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে যাবে বার্ষিক পরীক্ষা। অবিলম্বে পুলিশ ও প্রশাসনের কড়া হাতে রাশ টানা উচিত বলেই মনে করেন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা। করিমপুরে সেনপাড়া রাধারানি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় কিংবা বহরমপুর লাগোয়া হিকমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় মনে করেন, প্রশাসনের উচিত পদক্ষেপ করা। কিন্তু সব কাজই প্রশাসনকে করতে হবে কেন? যাঁরা ডিজে বাজাচ্ছেন, তাঁদের কারও সন্তান কিংবা কারও ভাই-বোনও তো পরীক্ষা দিচ্ছে। তাঁদেরও তো এ ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি।

বানজেটিয়া মাঠে গত কয়েক দিন ধরে সমানে এলাকা কাঁপিয়েছে ডিজে। প্রশাসন উদ্যোক্তাদের নিয়ে বৈঠক করার আশ্বাস দিয়েছে। বহরমপুরের মবকুমাশাস দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মাইক বা ডিজে বক্সের অনুমতি দিই না। পুলিশকে বলছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করতে। তেহট্টের মহকুমাশাসক সুধীর কোন্তম জানান, ডিজে নিষিদ্ধ। কেউ তার ব্যবহার করলে পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন