ক্লাসে ফিরছে তোলা চেয়ে ধৃত ছাত্রেরা

ক্লাসে এক জায়গায় বসা যাবে না। স্কুলে এক সঙ্গে ঘোরাফেরা করা যাবে না। মোবাইল নেওয়া যাবে না। এমনকী স্কুলের বাইরেও যাতে তারা মেলামেশা না করে তা বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে। ‘বস নামে একটি বাংলা ছবি দেখে তোলাবাজির চক্করে নামা ছাত্রদের এমনই নিদান দিল স্কুল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:১১
Share:

ক্লাসে এক জায়গায় বসা যাবে না।

Advertisement

স্কুলে এক সঙ্গে ঘোরাফেরা করা যাবে না।

মোবাইল নেওয়া যাবে না।

Advertisement

এমনকী স্কুলের বাইরেও যাতে তারা মেলামেশা না করে তা বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে।

‘বস নামে একটি বাংলা ছবি দেখে তোলাবাজির চক্করে নামা ছাত্রদের এমনই নিদান দিল স্কুল।

মঙ্গলবার দুপুরে কালীগঞ্জের দেবগ্রামে শিক্ষকরা অভিযুক্ত একাদশ শ্রেণির ছয় ছাত্রের অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা আলোচনা হয়। স্কুল সূত্রের দাবি, অভিভাবকেরা নিজের ঘাড় থেকে দোষ ঝেড়ে বিশেষ করে‌ সঙ্গদোষের কথাই বলেছেন। তাই ওই ছেলেরা যাতে দল পাকাতে না পারে, এমনই নিদান দিয়েছে স্কুল।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দেবগ্রামে এক শিক্ষক ও এক সোনা ব্যবসায়ী-সহ তিন জনকে হুমকি দিয়ে তোলা চাওয়া হয়েছিল। ‘বস’ নামে একটি ছবির অনুকরণে ‘সুরিয়া এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট’ কোম্পানি তৈরি করে ওই ছয় ছাত্র এ সব করছিল বলে অভিযোগ। গত ২৭ অগস্ট পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।

বেশ কিছু দিন হোমে থাকার পরে শিক্ষক দিবসে কৃষ্ণনগরে জুভেনাইল আদালতের বিচারক শর্তসাপেক্ষে তাদের জামিন দেন। শর্ত ছিল— অভিযুক্ত ছয় ছাত্র ও তাদের বাবাদের আলাদা ভাবে এক হাজার টাকা করে ব্যাক্তিগত বন্ড দিতে হবে। ছেলেরা যাতে বিপথে না যায় সে দিকে বাবা- মায়েরা নজর দেবেন বলেও লিখিত ভাবে আদালতে জানান। এ ছাড়া অভিযুক্তদের সপ্তাহে এক দিন করে জুভেনাইল আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

জামিন পাওয়ার পরে, গত ৯ সেপ্টেম্বর ওই ছেলেরা স্কুলে গিয়ে ক্লাস শুরু করেছিল। দু’টি পিরিয়ড হওয়ার পরে বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। সে দিনই তাদের অফিসে ডেকে কথা বলেন প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকেরা। কেন তাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ উঠেছে, আদালত-থানা-হোমে কী ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে, সে বিষয়ে শিক্ষকরা জানতে চান। সে দিনও ছেলেরা দাবি করে, তারা নির্দোষ। এর পরেই তাদের সাময়িক ভাবে স্কুলে আসতে নিষেধ করা হয়েছিল।

এ দিন স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে অভিভাবকদের জানানো হয়, ছয় ছাত্রের বিরুদ্ধে যে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, ইতিপূর্বে স্কুলের কোনও ছাত্রের বিরুদ্ধে কখনও তা আসেনি। তাদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে স্কুলে পড়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার জন্য বাবা-মাকে সজাগ থাকতে হবে। বুধবার থেকে তাদের স্কুলে আসতে বলা হয়েছে। তবে অভিভাবকরা জানিয়েছেন, এ দিন তাদের আদালতে হাজিরা রয়েছে। তাই তারা কাল, বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলে আসবে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা স্টাফ কাউন্সিলের সভাপতি জানান, তোলা চেয়ে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ওই ছয় ছাত্রেরা যে গ্রেফতার হয়েছিল, বাকি ছাত্রছাত্রীরাও তা জানে। তাই জামিন পাওয়ার পরেও তাদের কিছু দিন স্কুলে আসতে নিষেধ করা হয়েছিল। এখন স্কুলে এলেও তাদের চলাফেরার উপরে নজর রাখা হবে। তাদের কোনও সমস্যা হলে তারা শিক্ষকদের জানাতে পারে।

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘ওই ছয় ছাত্রের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে আমাদের মনে হয়েছে যে ওরা একটি দল পাকিয়েছে। তা ভাঙতে যা কিছু দরকার, অভিভাবকদের করতে বলা হয়েছে। ওঁরাও কথা দিয়েছেন, ছেলেদের উপরে নজর রাখবেন। এতে ওদেরই উপকার হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন