একশো গাড়ি-বাস হাঁকিয়ে সুব্রত ‘একা’

গাড়ি-বাস মিলিয়ে সংখ্যাটা একশো দশ। হাতের তেলো দিয়ে কপালে নৌকা করে সেই প্রলম্বিত যান-সারি দেখতে দেখতে অস্ফূটে বলেই ফেললেন গ্রামবাসী, ‘‘বাব্বাঃ, কী দাপট!’’

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৬
Share:

সুব্রতর সঙ্গে আসা গাড়ির সার। জঙ্গিপুর মহকুমাশাসকের দফতরের বাইরে। —নিজস্ব চিত্র

গাড়ি-বাস মিলিয়ে সংখ্যাটা একশো দশ। হাতের তেলো দিয়ে কপালে নৌকা করে সেই প্রলম্বিত যান-সারি দেখতে দেখতে অস্ফূটে বলেই ফেললেন গ্রামবাসী, ‘‘বাব্বাঃ, কী দাপট!’’

Advertisement

যে দাপটের খোঁজ মেলেনি তাঁর চার বছরের মন্ত্রীত্বে, গাঁয়ে গঞ্জে তাঁর পা পড়েনি বলে যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢাউস মিছিল করেছিলেন, এ দিন দূর থেকে তাঁর সুবিশাল কনভয় দেখে তাঁরাও কিঞ্চিৎ কুঁকড়েই রইলেন।

একদা মৎস্যমন্ত্রী সুব্রত সাহা শেষতক মনোনয়ন জমা দিলেন। যা দেকে সাগরদিঘির গুটিকয়েক সুব্রত পন্থী ভরা গলায় বলছেন, ‘‘এ বার, দাপট দেখেছেন!’’

Advertisement

মনোনয়নের প্রথম সকালেই ২৫ গাড়ির কনভয় এনে তাক লাগিয়েছিলেন, দলের সুব্রত বিরোধী হিসেবে পরিচিত সামশুল হোদা। নির্দল প্রার্থী সেই সামসুলের ‘মু তোড় জবাব’ই বটে বলে মনে করছেন সুব্রত অনুগামীরা।

শহরের গোটা ম্যাকেঞ্জি স্টেডিয়াম জুড়ে সার বেধে গাড়ি রেখে পাশেই খাওয়া দাওয়া সেরেছেন হাজার দুই সুব্রত সঙ্গী দলীয় কর্মী। স্টেডিয়ামের এক পাশেই সকাল থেকেই রীতিমত প্যান্ডেল বেঁধে তাঁদের জন্য চলছিল রান্নার বিপুল আয়োজন। সেই তালিকায় পঞ্চ ব্যা়ঞ্জন সাফ করে তাঁরাও তৃপ্তির ঢেঁকুড় তুলেছেন বইকী।

মাথার উপর কড়া রোদ। বেলা ঠিক ১২টা ৪০ মিনিটে সুব্রত ঢুকলেন মহকুমাশাসকের দফতরে। বিরাট মিছিলটাও তৃণমূল প্রার্তীর সঙ্গে পা রাখতে চেয়েছিল ওই অফিসে। কিন্তু ৫ জনের বেশি সঙ্গে যাবেন না’ বলে তাঁদের রুখে দেয় পুলিশ। মুচকি হেসে সুব্রতবাবু পুলিশকে আস্বস্ত করেছেন, ‘‘ভয় পাবেন না ওঁরা নিয়ম মেনেই যা করার করবেন।’’

সুব্রতবাবুর মনোনয়ন পত্রে এ দিন প্রস্তাবক হিসেবে সই করেন সাগরদিঘির পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকলিমা বিবি। স্ত্রী নমিতাও পাশে ছিলেন সারাক্ষণ। যেখানে স্বামী, স্ত্রী মিলে আয়করের হিসেবে সুব্রতবাবু বছরের আয় দেখিয়েছেন, প্রায় ৩১ লক্ষ টাকা।

মনোনয়ন জমা দিয়ে সুব্রত বলেছেন, “আমি কারও সঙ্গে এখানে টক্কর দিতে আসেনি। আমার শুভাকাঙ্খী হিসেবেই এসেছেন সাগরদিঘির মানুষজন।”

তাকে ঘিরে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর উত্থানের কথা সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে এবারেও সাগরদিঘিতে তার জয়ের ব্যাপারে তার আত্মবিশ্বাস যে ষোলআনা শুনিয়েছেন সে কথাও।

এদিন কারও নাম না করেই তিনি বলছেন,“ যারা আমার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছেন,তারা আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। কাউকে শত্রু ভাবি না। প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাউকেই ছোট বা বড় বলেও ভাবছি না।”

সেই সাতের দশক থেকে রাজনীতি করলেও ২০১১ সালেই জীবনের প্রথম বিধায়ক হন তিনি সাগরদিঘি থেকে। হন মন্ত্রীও । কিন্তু শেষ পর্যন্ত বছর কয়েক না গড়াতেই দলনেত্রী তাকে সরিয়ে দেন মন্ত্রীত্ব থেকে।

এ বারে দল তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয় কিনা তা নিয়ে জেলা রাজনীতিতে কৌতুহলও কম ছিল না। বিক্ষুব্ধরা তার বিরুদ্ধে বার বার সরব হয়েছেন সাগরদিঘিতে। পুড়িয়েছেন তার কুশপুতুলও। কিন্তু সুব্রতবাবু সে সবে গুরুত্ব দেন নি কখনও।

তবু তাকে নিয়ে সাগরদিঘিতে যে বিতর্কের শেষ নেই এটা তিনিও জানেন। তবে, তিনি যে বেঙে পড়েননি এ দিন বিশাল কনভয় নিয়ে তারই প্রমাণ রাখার চেষ্টা করেছেন।

তবে দলে সুব্রত-বিক্ষুব্ধ এক নেতা বলছেন, ‘‘নিজেকে চিনিয়ে দিতেই সেই ভাড়া করেই তো লোক আনতে হল!’’ সাগরদিঘির কংগ্রেস প্রার্থী আমিনুল ইসলামও বলছেন, “পরাজয় সুনিশ্চিত জানেন, তাই হতাশা কাটাতেই এমন হইহই করছেন সুব্রত।’’ সাগরদিঘির সিপিএম প্রার্থী রজব আলি মল্লিকের কথায়, “টাকা থাকলেই ভোটে জেতা যায় না। গাড়ি দেখিয়ে কাকে চমকাতে চাইছেন!’’

আর বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা সামসুল হোদা বলছেন, “উনি সাগরদিঘিতে বহিরাগত। ভালমতই জানেন তিনি সাগরদিঘির জন্য কিছুই করেন নি। রাজ্যের নেতাদের ধরে মনোনয়নটা কোনোরকমে আদায় করেছেন এবারও। দলের নেতারা তো আর ভোট দেবেন না। পুলিশকেও আর কাজে লাগাতে পারবেন না। দেখি কী করে জেতেন! এখানে উনি একা।’’

যা মনে করিয়ে দিচ্ছে, মনোনয়নের দিনেও সুব্রতর কাঁটা কিন্তু উঠল না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন