জলভাসির বর্ষা-নামচা

জল ঠেলে চরের স্কুলে শিক্ষকেরা

চর ফুঁড়ে সম্বৎসর প্রায় শুকিয়ে থাকা নালাগুলোয় জল ফিরেছে ফের। তবে নৌকা চলাচলের মতো সুগম্য নয়। তাই চরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচলের জন্য, স্বল্প জল আর কাদা থকথকে ওই নালা উজিয়েই মানুষের নিরন্তর চলাচল।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০৩:২৪
Share:

জলপথে: জলঙ্গির পরাশপুর চরে। —নিজস্ব চিত্র।

শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহেই ফুঁসতে শুরু করেছে পদ্মা। তার চেনা চেহারা ধরা পড়তেই পদ্মার বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চরের জীবনেও জলজ ছাপ পড়তে শুরু করেছে।

Advertisement

চর ফুঁড়ে সম্বৎসর প্রায় শুকিয়ে থাকা নালাগুলোয় জল ফিরেছে ফের। তবে নৌকা চলাচলের মতো সুগম্য নয়। তাই চরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচলের জন্য, স্বল্প জল আর কাদা থকথকে ওই নালা উজিয়েই মানুষের নিরন্তর চলাচল। চরের বাসিন্দারা অভিমান করে বলছেন, ‘‘উচ্ছিষ্টের মতো পড়ে আছি, আমাদের কথা আর কে ভাবে বলুন কর্তা!’’

স্থানীয় আবাদি মানুষের মতো, চরের স্কুলে শিক্ষকতা করতে আসা শিক্ষক এমনকী শিক্ষিকারাও ভিজে কাপড়েই চলেছেন স্কুল-পথে। ছেলেপুলেরা বই-ব্যাগ মাথায় তুলে নগ্ন হয়েই পেরিয়ে যাচ্ছে প্রায় অগম্য জলপথ। হেসে বলছে, ‘‘আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে!’’

Advertisement

জলঙ্গির উদয়নগর খণ্ড, চর পরাশপুর এবং চরভদ্রা এলাকায় দু’টি প্রাথমিক স্কুল এবং একটি মাধ্যমিক স্কুল। তিন স্কুলে ১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। গত দু’সপ্তাহ ধরে শিক্ষকদের লুঙ্গি, গামছা নিয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে। শিক্ষিকারা নিয়ে যাচ্ছেন বাড়তি শাড়ি। জল-কাদা পেরিয়ে স্কুলের ঢোকার আগে কোনও বাড়িতে গিয়ে তাঁরা ভেজা শাড়ি বদলে নিচ্ছেন ফের। জলঙ্গির চরভদ্রা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষিকা গীতা বিশ্বাস বলছেন, ‘‘ভেজা শাড়ি পরেই প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এ ভাবে চরের গ্রামে পৌঁছনোর পর কোনও বাড়িতে ঢুকে শাড়ি বদলে ফেলি। তারপর স্কুল। বাড়ি ফেরার সময়েও একই রুটিন। আর পেরে উঠছি না।’’

বুক-সমান জল পেরিয়ে স্কুলে যান কী করে? ৫৮ বছরের গীতার উত্তর, ‘‘কী আর করি বলুন! আমরা না-গেলে ছাত্রদের বড্ড ক্ষতি হয়ে যাবে। এমনিতেই চরের ছাত্রছাত্রীরা পিছিয়ে আছে। ওদের অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া যে।’’

দুর্ভোগ নিয়ে চর পরাশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াসিম জানা বললেন, ‘‘প্রতি বছরই এ ভাবেই যাতায়াত করতে হয় আমাদের। গামছা-লুঙ্গি নিয়ে যাই। নালা পেরিয়ে পোশাক বদলে নিই।’’

চরের দু’টি গ্রামের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন কাজে মাঝেমধ্যেই এ পারের বাজারে আসতে হয়। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু শিক্ষকদের অনেকেই সাঁতার জানেন না। ওঁদের কাছে এই যাত্রা নরক-যন্ত্রণা।’’

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান নীহারকান্তি ভট্টাচার্য। বুধবার নীহারবাবু বলেন, ‘‘এ নিয়ে মঙ্গলবার আমরা আলোচনায় বসেছিলাম। সমস্যার কথা শুনেছি। কিন্তু স্কুল তো বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। প্রয়োজনে শিক্ষকেরা ছুটি নিতে পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন