প্রচারই সার, মন্দির-শহরেও উড়ছে প্লাস্টিক

এ যেন পর্বতের মুষিক প্রসব! ধরপাকড়, জরিমানা, মাইকে প্রচার, হ্যান্ডিবিলের ছড়াছড়ি দেখে তামাম নবদ্বীপবাসী ধরে বসেছিলেন বাজার থেকে প্লাস্টিক বিদায় হল বলে। দিন কতক যে তা হয়নি এমন নয়। বাজারে গেলে শোনা যেত দোকানির সবিনয় অনুরোধ, ‘‘দাদা, আমরা প্লাস্টিক রাখি না।’’ বদলে গিয়েছিল বাড়ির অন্দরমহলের ছবিটাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১০
Share:

এ যেন পর্বতের মুষিক প্রসব!

Advertisement

ধরপাকড়, জরিমানা, মাইকে প্রচার, হ্যান্ডিবিলের ছড়াছড়ি দেখে তামাম নবদ্বীপবাসী ধরে বসেছিলেন বাজার থেকে প্লাস্টিক বিদায় হল বলে। দিন কতক যে তা হয়নি এমন নয়। বাজারে গেলে শোনা যেত দোকানির সবিনয় অনুরোধ, ‘‘দাদা, আমরা প্লাস্টিক রাখি না।’’ বদলে গিয়েছিল বাড়ির অন্দরমহলের ছবিটাও। ঝুল ঝেড়ে গিন্নি কর্তার হাতে বাজারের থলেটা ধরিয়ে দিচ্ছেন এমন দৃশ্যও নজরে এসেছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই।

ধরপাকড়, প্রচার, ঘোষণা থিতিয়ে আসতে বাজারে ফের দেখা মিলছে পলিব্যাগের। দ্বিগুণ বেগে ফিরে এসেছে সাতসকালে খালি হাতে বাজারে বেরিয়ে পলিব্যাগে শাকসব্জি-মাছমাংস কিনে বাড়ি ফেরার চালু রেওয়াজ। হ্যান্ডবিল, মাইক প্রচার, পুলিশ নিয়ে পুরসভার আচমকা দোকান-বাজারে হানা কিছুতেই কাজে এল না

Advertisement

অথচ নবদ্বীপকে প্লাস্টিক মুক্ত করতে স্থানীয় গত বছরের ৩০ অগস্ট পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলরদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শহরের কোথাও ৫০ মাইক্রন ওজনের নীচে পলিব্যাগে কোনও জিনিস বিক্রি করা যাবে না। তা না করলে করলে তা শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। পুরসভার পক্ষ থেকে প্রথমে শহর জুড়ে মাইকে প্রচার করে এবং হ্যান্ডবিল দিয়ে ওই নির্দেশ সকলকে অবহিতও করে।

সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম থেকেই নির্দেশ কার্যকর হয়।

কিন্তু নির্বিচারে পলিব্যাগে ব্যবহারে অভ্যস্থ নবদ্বীপের ক্রেতা বিক্রেতা দু’পক্ষের কেউই এই নির্দেশে বিশেষ খুশি হননি, তা বলাই বাহুল্য। পুজোর মরশুম শেষ হতেই পুরসভার তরফে শুরু হয়েছিল প্লাস্টিক ব্যবহারে রাশ টানা। বাজারে, দোকানে আচমকা হানা দিয়ে নিষিদ্ধ পলিব্যাগ, প্লাস্টিকের কাপ বাজেয়াপ্ত করা শুরু হয়। পুরসভার এই পদক্ষেপে পলিব্যাগের ব্যবহার কমতে শুরু করে শহরে।

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই প্লাস্টিক নিয়ে কড়াকড়ি হাল্কা হতেই ফের নবদ্বীপ সেই তিমিরে। আবার পলিব্যাগের রমরমা চোখে পড়ছে খাবারের দোকান থেকে মুদিখানা, সব্জিবাজার থেকে মাছ-মাংসের বাজার সর্বত্র।

পুরসভার নিষেধ সত্ত্বেও শহর জুড়ে পলিব্যাগের বলগাহীন ব্যবহারে উদ্বেগ বেড়েছে নবদ্বীপবাসীর। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহারে গোটা নবদ্বীপ শহরের নিকাশি ব্যবস্থা কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, সঙ্গে দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সার্বিক স্বাস্থ্য। নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস বলেন, “প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে পুরসভা নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরে সাময়িক ভাবে তা বন্ধ হয়েও ছিল। কেউ কেউ নিষেধাজ্ঞা মেনে চললেও বেশির ভাগ মানুষই ফিরে গিয়েছেন পুরানো অভ্যাসে। বরং দেখা যাচ্ছে আগের থেকে বেশি করে পলিব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে।”

ব্যবসায়ী মহলের একাংশ জানাচ্ছেন, নিয়মিত লরি বোঝাই করে পাতলা পলিথিনের নানা আকারের ব্যাগ, চায়ের কাপ শহরে ঢুকছে। এবং তা দেদার বিকোচ্ছে শহরের ছোট বড়, পাইকারি খুচরো সব ধরনের দোকানেই।

এ প্রসঙ্গে নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে পুরসভার অবস্থান স্পষ্ট। কোনও ভাবেই তার অন্যথা হতে দেওয়া যাবে না। ফের অভিযান শুরু হবে।’’

সবচেয়ে আশঙ্কার কথা সামনেই নবদ্বীপের সবচেয়ে বড় উৎসব দোল। পনেরো দিন ধরে কয়েক লক্ষ মানুষ পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসবেন। এখন থেকে কঠোর না হলে উৎসবে পলিব্যাগের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ করা অসম্ভব বলেই মনে করছেন নবদ্বীপের মানুষ। যদিও এ নিয়ে দোকানদারদের সাফ কথা ‘পলিব্যাগ না দিলে অসন্তুষ্ট হন ক্রেতারা।’ বাজারের সব্জি বিক্রেতা থেকে নামীদামী দোকানের বিক্রেতা সকলের অভিজ্ঞতা এক। তাঁদের বক্তব্য মানুষ যদি সচেতন না হয় তা হলে তাঁরা সচেতন হতে গিয়ে ক্রেতা হারানোর ঝুঁকি কেন নেব?

কিন্তু শহরের দোকানে যাঁরা আগে থেকেই পলিব্যাগ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, দোকানে বিক্রিতে কিন্তু ভাটা পড়েনি। রীতিমতো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েই লোকজন কেনাকাটা করছেন। এবং পলিব্যাগ ছাড়াই দিব্যি সে সব নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। তাহলে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন