মেলেনি সরকারি ত্রাণ

দশ মিনিটের ঝড়ে ডোমকলে গুঁড়িয়ে গেল হাজার ঘরবাড়ি

শেষ চৈত্রের সন্ধ্যায় আচমকা ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ডোমকলের বিস্তীর্ণ এলাকা তছনছ হয়ে গেল। মিনিট কুড়ির ওই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাষের। ভেঙে পড়েছে অন্তত ১২০০টি বাড়ি। মঙ্গলবার ডোমকলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১২০০টি বাড়ি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫৬
Share:

শেষ সম্বলটুকুর খোঁজে। —নিজস্ব চিত্র

শেষ চৈত্রের সন্ধ্যায় আচমকা ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ডোমকলের বিস্তীর্ণ এলাকা তছনছ হয়ে গেল।

Advertisement

মিনিট কুড়ির ওই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাষের। ভেঙে পড়েছে অন্তত ১২০০টি বাড়ি। মঙ্গলবার ডোমকলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১২০০টি বাড়ি। ঝড়-বৃষ্টিতে পাঁচিল ভেঙে মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় মোমিনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ইয়াসমিনা খাতুন। বছর আটেকের ওই ছাত্রীর গায়ে পাঁচিল চাপা পড়লে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। জখম হয়েছেন বুলুয়ারা বিবি নামে এক মহিলাও।’’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয় ডুবোপাড়া এলাকার একটি মুরগির খামার। ঝড়ে ওই খামারের নড়বড়ে কাঠামো ভেঙে যায়। তারপর ঝড় ও বৃষ্টির যৌথ হানার মারা গিয়েছে খামারের হাজার খানেক মুরগি।

ওই ঝড়ে কলা চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। ডোমকলের বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিরা অর্থকরী ফসল হিসেবে কলা চাষ করেন। কিন্তু এ দিনের ঝড়ে সেই ফলন্ত কলা তছনছ হয়ে গিয়েছে। বাগানের সারি সারি কলাগাছের শেকড় উপড়ে গিয়েছে। ডোমকলের বিডিও সোয়াং গ্যাটসো ভুটিয়া বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, অন্তত হাজার খানেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৩৫০টি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বুধবার সকালে ওই এলাকায় ব্লকের কর্মীরা যান। তাঁরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জরিপ করছেন। জেলা প্রশাসনের কাছ‌ে ক্ষতিপূরণ চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে।’’

Advertisement

এ দিন দুপুর থেকেই আকাশের মুখ ভার ছিল। তবে সন্ধ্যা নামতেই আকাশ আরও কালো হয়ে ওঠে। আচমকা শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া আর শিলাবৃষ্টি। বৃষ্টি শুরু আগে পাড়ার সমবয়সীদের সঙ্গে খেলছিস ইয়াসমিনা। বৃষ্টি দেখতেই সে বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুট লাগায়। কিন্তু ততক্ষনে ঝড়-বৃষ্টির প্রাবল্য অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায় তার বাড়ির লোককজন মূল ফটকে ভিতর থেকে খিল তুলে দিয়েছেন। কিন্তু দুই-একবার ওই বালিকা দরজা ধাক্কা দিলেও তা কেউই শুনতে পাননি। ফলে ছোট্ট মেয়েটি ফটকের সামান্য সেডের তলায় মাথা গুঁজেছি‌ল। আর সেই সময়ে হুড়মুড়িয়ে পড়ে যায় পাঁচিল। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকের মধ্যে মোমিনপুর-বিলপাড়া এলাকাই ঝড়ে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। ঝড়ের একদিন পর, বুধবারও অনেকেই ঘরছাড়া। ভাঙা ঘরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কারও বাড়ির চালায় পড়ে আছে মস্ত গাছ। কারও চালা উড়ে গিয়েছে কয়েক মিটার দূরে। গ্রামের জিয়ারুল মণ্ডলের কথায়, ‘‘এমন ঝটকা ঝড় আগে দেখিনি। কয়েক মিনিটে গোটা এলাকা তছনছ করে দিয়ে চলে গিয়েছে। আমরা পরদিনও বাড়িতে ঢুকতে পারিনি। আমাদের মত গ্রামের অনেক বাড়িতে রান্নাও বন্ধ। আত্মীয়দের বাড়ির খাবারই এ দিন খেয়েছে।’’

দৃশ্যতই গোটা গ্রাম যেন রাতারাতি তাসের ঘরে পরিণত হয়েছে। কেউ মাথার উপর থেকে উড়ে যাওয়া টিন কুড়াতে আবার কেউ বা পাটকাঠির চালাটাকে গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত। গ্রামের বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘ঘরে আনাজ থাকলেও তা বার করা যায়নি। ফলে বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি।’’

বিধবা হারেজান বেওয়ার কথায়, ‘‘একাই থাকতাম বাড়িতে। ঝড়ে ঘর ভাঙলেও কপাল জোরে বেঁচে গিয়েছি। পাড়ার লোকেদের দেওয়া খাবার খেয়ে কাটাতে হয়েছে। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে ঝড়-বিধ্বস্ত ওই মুলুকে এ দিন কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাদের পা পড়েনি। প্রশাসনের তরফেও মিলছে না সাহায্য। ফলে মানুষের মধ্যে ক্ষোভও দেখা দিয়েছে চরমে। সরকারি সাহায্য কেন নেই? এই প্রশ্নই মুখে মুখে ফিরছে বিধ্বস্ত এলাকার লোকজনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন