খালি পেটে সামলালেন রথযাত্রাও

রোজা রেখেই সবার শরিক হয়েছেন ওসি

মুসলিম অধ্যুষিত বেলডাঙায় সকাল থেকে দুপুর অবধি থানায় ভিড় হয় বেশি। বেলা গড়ালে রোজাদারেরা কাহিল হতে থাকেন। শুরু হয়ে যায় ইফতার আর মগরিবের নমাজের প্রস্তুতি। সকালের সেই কাজের সময়ে উপবাসী নাগরিকেরা থানায় এসে যদি শোনেন ‘বড়বাবু কোয়ার্টারে গিয়েছেন খেতে, একটু বসতে হবে’’— তাঁদের কেমন লাগে?

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ১২:৩০
Share:

ইফতার: রোজার পরে সন্ধ্যার পঙ্ক্তিভোজে বেলডাঙার ওসি সমিত তালুকদার (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

তিনি আদৌ মুসলিম নন, ইদে নমাজও পড়েননি। কিন্তু রমজান মাসে অন্তত পাঁচ দিন রোজা রেখেছেন বেলডাঙা থানার বড়়বাবু।

Advertisement

মুসলিম অধ্যুষিত বেলডাঙায় সকাল থেকে দুপুর অবধি থানায় ভিড় হয় বেশি। বেলা গড়ালে রোজাদারেরা কাহিল হতে থাকেন। শুরু হয়ে যায় ইফতার আর মগরিবের নমাজের প্রস্তুতি। সকালের সেই কাজের সময়ে উপবাসী নাগরিকেরা থানায় এসে যদি শোনেন ‘বড়বাবু কোয়ার্টারে গিয়েছেন খেতে, একটু বসতে হবে’’— তাঁদের কেমন লাগে?

ওসি সমিত তালুকদারের মাথায় কথাটা ঘুরছিলই। নদিয়ার ধানতলায় দত্তপুলিয়া গ্রামে তাঁর আদত বাড়ি। বেলডাঙা থানায় এসেছেন মাস চারেক হল। তাঁর কথায়, ‘‘খালি পেটে ভ্যাপসা গরমে লোকগুলো কত ক্ষণ অপেক্ষা করবে? ভিড়ের সময়টা আমরা অনেকেই তাই জল খেয়ে, চা খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। ভিড় কমলে তবে খেতে গিয়েছি।’’ সম্ভব হলে, পুরোদস্তুর রোজা করার কথাও মাথায় ঘুরছিল। তাতে অন্তত বার্তা দেওয়া যায়— ‘আমি তোমাদেরই লোক’।

Advertisement

রমজান মাস শুরুর ঠিক আগেই থানায় আসেন কাপাসডাঙার ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ লিয়াকত শেখ। তাঁকেই ওসি জিগ্যেস করেছিলেন, তিনিও রোজা রাখতে পারেন কি না। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘কেন পারবেন না! প্রথম দিকে একটু কষ্ট হয়। পরে ঠিক হয়ে যায়। এতে শরীরও ভাল থাকে।’’ একই মত স্থানীয় মারকাজ মসজিদ কমিটির সম্পাদক আরফাত শেখেরও।

মনস্থির করে ফেলেন ওসি। পুরো মাস না পারলেও বাছাই করা কয়েক দিন রোজা রাখবেন। রমজান মাসের শুরু আর শেষের দিন বিশেষ পবিত্র বলে গণ্য করেন অনেকে। কাজেই ওই দু’টো দিন আর যে দিন থানা ইফতার দেবে— এই তিন দিন বেছে নেন তিনি। এ ছাড়া বড়ুয়া আর সরুলিয়ার দু’টি মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে তাঁকে ইফতারে আমন্ত্রন করা হয়েছিল। সেই দু’দিনও রোজা রাখেন সমিত।

বড়ুয়া ব্যবসায়ী কমিটির সম্পাদক মোকতাদির হোসেন‌ বলেন, ‘‘ইদের জন্য থানায় শান্তি কমিটির বৈঠকে আমি ছিলাম। সেখানে এক মসজিদ কমিটির সদস্য বললেন, ‘আমাদের ওসি রোজা রাখেন, জানেন!’ আমি বিশ্বাস করিনি। পরে সত্যি জেনে খুব অবাক হয়েছি। ওঁর উদার মনোভাব খুব ভাল লেগেছে।’’

রমজান মাসের শেষ দিন, রবিবার খালি পেটেই সমিত সামাল দিয়েছেন রথের শোভাযাত্রা। নিজে ছাপাখানা মোড়ে নেমে সামলেছেন যান‌জট। রথের ভিড় কাটতে সন্ধ্যা গড়িয়েছে। কিন্তু ওসি তখনও হাসিমুখে। বলছেন, ‘‘ইফতার করতে একটু দেরি হল, এই যা! এই তো ইদ হয়ে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন