মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
প্রশাসনিক বৈঠকটা শেষতক জেলা সদর থেকে সরিয়েই নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা নেতাদের কপালে জুটেছিল মৃদু ধমক, ‘সামনে ভোট, বৈঠক ডোমকলে হচ্ছে না কেন?’
কথাটা তিরের মতো বিঁধেছিল বুঝি, ডোমকলের দায়িত্বে থাকা মান্নান-তনয় সৌমিক প্রায় রাতারাতিই ব্যবস্থা করে সে যাত্রা মুখ রক্ষা করেছিলেন বটে জেলা নেতাদের। তবে, বিরোধীরা যা দেখে মুখ বেঁকিয়ে বলেছেন, ‘‘ছেলেটার আশা দেখি এখনও জিইয়ে আছে!’’
তা আছে, বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পাওয়ার পরে, খরচে খামতি রাখেননি সৌমিক হোসেন। ডোমকলের ভূমিপুত্র হিসেবে নিজেকে চিনিয়ে দিতে রাতারাতি পেল্লাই প্রাসাদ গড়ে, নিজের ভোটার কার্ড বহরমপুর থেকে ডোমকলের ঠিকানায় বদলে ফেলে, চেষ্টার কসুর করেননি সৌমিক। তবে, শেষ রক্ষা হয়নি। দেদার ভোটে পিছিয়ে, শেষতক সেই তিন নম্বরে থামতে হয়েছিল তাঁকে।
সেই হারের চাকাটা ঘুরিয়ে দেওয়ার ফের একটা সুযোগ এসে গিয়েছে তাঁর হাতে। তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘এটাই কিন্তু ওর (সৌমিক) লাস্ট চান্স, জিতলে বাঁচবে, না-জিতলে...!’’ যা শুনে সৌমিক ভাঙছেন না, বলছেন, ‘‘দেখুন না কী হয়!’’ তা দেখার মতো বিষয় বটে! বিধানসভা নির্বাচনের পরে ডোমকলের শেয়ালমারি খালে জল তেমন না থাকলেও ঘোলা কাদা গড়িয়ে গিয়েছে বিস্তর। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি থেকে আশপাশের গ্রাম পঞ্চায়েত হাত বদলে চলে গিয়েছে তৃণমূলের হাতে। নেতাদের দল পরিবর্তন ঘটেছে ঢের।
না জিতেও, দল বদলিয়ে তৃণমূল এখন এলাকার সিংহভাগের দখলদারি নিয়ে বসে রয়েছে। কংগ্রেসের অনেকেই এখনও পা বাড়িয়ে শাসক দলের দিকে। তা হলে?
নির্বাচনের কারবারিরা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন আরও একটা হিসেব— গত ভোটে রাজ্য জুড়ে জোট হলেও ডোমকল ছিল ব্যতিক্রম। কংগ্রেস ভোট কাটলেও সেই সীমান্ত এলাকায় বামেদের ভোট ব্যাঙ্কে কিন্তু হাত পড়েনি। প্রায় সাড়ে ৭২ হাজার ভোট পেয়েছিল তারা। আর, তৃণমূলের ঝুলিতে ছিল সাকুল্যে ৪৬ হাজার ভোট।
ছবিটা বদলে গিয়েছে অনেক। তবে কংগ্রেস মনে করছে, গত বার জোট না হলেও এ বার জোটের দৌলতে কংগ্রেসের মরা গাঙে জোয়ার এসেছে। দুই বড় শক্তির মিলনে আবারও রুখে দাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করছে তারা। ইতিমধ্যেই মিছিলে সভাতে শাসককে পাল্লা দিয়েছে তারা। এমনকী তাদের ভিড়কে টেক্কা দিতে তৃণমূলকে বেলডাঙা, ফরাক্কা, সুতি রঘুনাথগঞ্জ থেকেও যে লোক আনতে হয়েছে, তা দলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। কংগ্রেসের এক নেত্রী বলছেন, ‘‘দেখুন না কী হয়, এই পুরভোটই প্রমাণ করে দেবে, ডোমকলে কংগ্রেস আছে
না নেই!’’