জল কষ্টে শুকোচ্ছে ছাতি

জলকষ্টে ভুগছেন করিমপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নলকূপে সারাদিনে ঘণ্টা খানেকও জল মেলে না বলে অভিযোগ। ফলে পানীয় জলের জন্য এলাকার লোকজনের ভরসা বাজারের বোতলবন্দি জল। বাজারের জল কেনার সামর্থ্য যাঁদের নেই, তাঁদের বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ উজিয়ে অন্য পঞ্চায়েত এলাকা থেকে জল আনতে হয়।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০০:২৯
Share:

জলের জন্যে অপেক্ষা (বাঁ দিকে)। ১৯৮২ সাল থেকে এ ভাবেই পড়ে অসমাপ্ত জলাধার।—নিজস্ব চিত্র।

জলকষ্টে ভুগছেন করিমপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নলকূপে সারাদিনে ঘণ্টা খানেকও জল মেলে না বলে অভিযোগ। ফলে পানীয় জলের জন্য এলাকার লোকজনের ভরসা বাজারের বোতলবন্দি জল। বাজারের জল কেনার সামর্থ্য যাঁদের নেই, তাঁদের বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ উজিয়ে অন্য পঞ্চায়েত এলাকা থেকে জল আনতে হয়।

Advertisement

মহামায়াপল্লির বাসিন্দা নমিতা শীল, অলকা হালদারদের অভিযোগ, “পাড়ার তিনটি নলকূপে আগে দিনে তিন বার জল আসত। দু’মাস ধরে নলকূপগুলো বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। জল আসে না। দূরের গ্রাম থেকে জল আনতে হচ্ছে।” একই অভিযোগ নাটনার গৃহবধূ মিনতি বিশ্বাস কিংবা লক্ষ্মীপাড়ার সুবল মণ্ডলেরও। তাঁরা জানান, বাড়ির কাছে জল মেলে না। অনেক দূরের নলকূপ থেকে জল আনতে হয়। মাঝেমধ্যে কেনা জলের উপর ভরসা করতে হয়।

করিমপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এই গরমে মানুষ পানীয় জল পাচ্ছেন না। অথচ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কিছু কর্মী অর্থের বিনিময়ে লাগোয়া ধানের জমি ও পুকুরে নিয়মিত জল সরবরাহ করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সব জেনেও কোনও পদক্ষেপ করেন না। যে দু’একটা নলকূপে যৎসামান্য জল পাওয়া যায়, তারও কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। দফতরের কর্মীরা পরিকল্পনা করে কৃত্রিম জলের অভাব তৈরি করেছেন। ফলে রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে জলের কারবারিরা।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৪ সালে তৈরি হওয়া একটি পাম্পের মাধ্যমে করিমপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকার ১০৫টি নলকূপে জল সরবরাহ শুরু হয়। দুই পঞ্চায়েতের প্রায় ২৪০০ মানুষ ওই প্রকল্পের মাধ্যমে পানীয় জল পেতেন। পাম্প তৈরি হলেও এখনও পর্যন্ত জলাধার তৈরি হয়নি। পরবর্তীতে লোকসংখ্যা বাড়তে থাকায় করিমপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকায় ২০১০ সালে আরও একটা পাম্প তৈরি হয়। সেই পাম্প করিমপুর ১ পঞ্চায়েত এলাকায় জল সরবরাহ করতে থাকে। আগের পাম্পটি জল সরবরাহ করতে থাকে শুধু করিমপুর ২ পঞ্চায়েত এলাকায়।

কেবল করিমপুর-২ পঞ্চায়েতের জন্য পৃথক পাম্প তৈরি হলেও কেন এই জলকষ্ট? পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, করিমপুর এলাকার নলকূপের জলে এত আয়রন থাকে যে তা পান করার অযোগ্য। মাস খানেক আগে জল সরবরাহকারী পাম্পটি বিকল হয়ে গিয়েছে। জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে বার বার জানিয়েও সে পাম্প এখনও সারানো হয়নি। ফলে এই সমস্যা।

করিমপুর জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাম্প অপারেটর স্বপন রায় বলেন, “এখানে বহুদিন আগে থেকে দু’টি পাম্প চালানো হয়। আগে সারাদিনে পাঁচ ঘণ্টা জল সরবরাহ করা হত। গত কয়েক মাস আগে থেকে একটি পাম্পের সমস্যা হয়। গত ১২ এপ্রিল ওই পাম্পটি সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়। আধিকারিকেরা এসে ১৬ এপ্রিল ওই পাম্পটি নিয়ে যান। কিন্তু সেই পাম্প এখনও মেরামত করে আমাদের কাছে পাঠানো হয়নি। একটা পাম্প থেকে মাঝেমধ্যে সামান্য জল দেওয়া হচ্ছে।”

তেহট্ট মহকুমার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিক প্রণবকুমার দে বলেন, “খারাপ হওয়া পাম্পটি সারাইয়ে পাঠিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন