বেহাল রাস্তার জন্য বিজেপিকে দোষারোপ করে প্রচার তৃণমূলের

যেমন ‘দিদি’র কথা, তেমন কাজ। ৮ আগস্ট শন্তিপুরের জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় সড়কের বেহাল হওয়ার দায় চাপিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাঁধে। দেরি না করে এই বিষয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে রাস্তায় নেমে পড়েছে শাসকদল তৃণমূলও। জাতীয় সড়কের এই অবস্থার জন্য মোদী সরকারকে দায়ী করে রানাঘাট শহরের মিশন রোড থেকে চূর্ণী ব্রিজ, কোর্ট মোড়, থানার মোড়, চাকদহের চৌরাস্তার মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে ফ্লেক্স ছেয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৪
Share:

রানাঘাটে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে তৃণমূলের পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।

যেমন ‘দিদি’র কথা, তেমন কাজ।

Advertisement

৮ আগস্ট শন্তিপুরের জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় সড়কের বেহাল হওয়ার দায় চাপিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাঁধে। দেরি না করে এই বিষয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে রাস্তায় নেমে পড়েছে শাসকদল তৃণমূলও। জাতীয় সড়কের এই অবস্থার জন্য মোদী সরকারকে দায়ী করে রানাঘাট শহরের মিশন রোড থেকে চূর্ণী ব্রিজ, কোর্ট মোড়, থানার মোড়, চাকদহের চৌরাস্তার মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে ফ্লেক্স ছেয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় চলছে সভা। গণ-স্বাক্ষর কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের দাবি তারা গণতন্ত্র মেনে আন্দোলনের পথে চলেছে। আন্দোলনে কাজ না হলে এলাকার মানুষকে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে জাতীয় সড়ক সংস্কার করতে উৎসাহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন নেতৃত্ব।

প্রতি বছরই বর্ষায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বেহাল হয়ে পড়ে। এ বারও বারাসত থেকে খন্দপথ। নদিয়ার দিগনগর, ফুলিয়া, মিলনবাগান, হবিবপুর, পাটুলি, সাঁটিগাছা, বাগানবাড়ি, কল্যাণী মোড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় বড় বড় গর্ত। আর এক জায়গা গোবিন্দপুরে কিছু দিন আগেও হাঁটু সমান গর্ত হয়ে পড়েছিল। মাটি আর খোওয়া দিয়ে তাতে জোড়াতালি মারা হয়েছে। তবে, অস্থায়ী সেই আস্তরণ ফের ধুয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির জলে। জোড়াতালিতে কাজ হয়নি শান্তিপুর বাইপাসেও। এই অবস্থায় দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশেই জাতীয় সড়ক নিয়ে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছেন জেলা নেতৃত্ব।

Advertisement

জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “মোদী সরকারের এই অপদার্থতার দায় আমাদের মা-মাটি-মানুষের সরকারের ঘাড়ে এসে পড়ছে। আমারা মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই যে জাতীয় সড়কের এই অবস্থার জন্য রাজ্য সরকার নয়, এর জন্য দায়ী বিজেপির মোদী সরকার।” রানাঘাট শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অসিত দত্ত বলেন, ‘‘মানুষের ধারণা জাতীয় সড়কের সংস্কারের দায়িত্ব বুঝি রাজ্য সরকারের। এই ভুল ধারণা ভাঙার জন্য এবং কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়াতেই আমরা দলের নির্দেশে এই প্রচার করছি।”

লোকসভা ভোটের পর থেকে নদিয়া জেলায় বিভিন্ন দল থেকে লোকজন যে ভাবে বিজেপিতে যোগ দিতে শুরু করেছেন, তাতে যথেষ্ট চিন্তিত তৃণমূল নেতৃত্ব। আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপি যে বড়সড় ধাক্কা দিতে চলেছে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে দল। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি বিরোধী একটা হাতিয়ার দরকার হয়ে পড়েছিল তৃণমূলের। দলেরই এক অংশের মতে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ককেই সেই হাতিয়ার করতে চাইছে তারা।

তবে জাতীয় সড়ক নিয়ে বিজেপিও পাল্টা যুক্তি সাজাতে শুরু করেছে। বিজেপি-র নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি কল্যাণ নন্দী বলেন, ‘‘এই জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে ইউপিএ সরকারের সময়ে। ঠিকাদারও নিয়োগ করেছে তারাই। তাই কোনও কারণে ঠিকাদার দেরি করে কাজ করলে তার দায় আমাদের সরকারের নয়।’’ শুধু তাই নয় বিজেপি তৃণমূলকেও ছেড়ে দিতে নারাজ। কল্যাণবাবু তাই স্পষ্ট জানান, বিরোধী দলে থাকার সময় এই তৃণমূলই জমি অধিগ্রহণে বাধা দিয়ে এসেছে বারবার। তখন তারা বিরোধিতা না করলে এতদিন হয়তো জাতীয় সড়ক চার লেনের হয়ে যেত। তাই মানুষের যদি কোনও দুর্ভোগ হয়ে থাকে তাহলে তার দায় তৃণমূলেরও।’’

জাতীয় সড়ক নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির এই চাপান-উতোরকে মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না সাধারণ মানুষ। রানাঘাটের কোর্টমোড় এলাকার চন্দন কর্মকার বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কের অবস্থা অনেক দিন থেকেই বেহাল। এত দিন কাউকে রাস্তায় নামতে দেখিনি। রাস্তার অবস্থা আগে আরও খারাপ ছিল। তখন তো এভাবে কাউকে ফ্লেক্স টাঙাতে দেখিনি।” গাংনাপুরের গৌরাঙ্গ পাল বলেন, ‘‘জাতীয় সড়ক দীর্ঘ দিনের সমস্যা। কেউই মানুষের জন্য আন্দোলন করছে না। আসলে সবাই রাজনীতি করছে। এখন দূরত্ব আছে তাই এসব হচ্ছে। আবার যখন ভাব হবে তখন এসব খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’

এই রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেই জাতীয় সড়ক সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে নদিয়া জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক পি সালিম বলেন, ‘‘জাতীয় সড়ক সংস্কারের জন্য ৪৫ কোটি টাকা এসেছে। আমারা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, সেই টাকা দিয়ে দ্রুত রাস্তা সংস্কার করে ফেলার জন্য। পুজোর আগেই কাজটা করে ফেলতে হবে।’’

ন্যাশানাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার প্রজেক্ট ডিরেক্টর তীর্থ রায় বলেন, ‘‘বারাসত থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের জন্য ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আমরা ধারাবাহিক ভাবে কাজ করতে পারছি না। বর্ষার মরসুম শেষ না হলে বিটুমিনাসের কাজ করে পিচের আস্তরণ দেওয়া যাবে না। এই অবস্থায় রাস্তাটাকে চলাচলের উপযোগী করার জন্য আপাতত পাথর ফেলে গর্ত বোজানোর কাজ করছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন