Dhuliyan

কন্টেনমেন্টে কড়াকড়ি, বাইরেই বেলাগাম ভিড়

ধুলিয়ানে বাসিন্দাদের বক্তব্য, এখন যখন এমনিতেই লোকসমাবেশ বারণ, তখন কেন এমন সভা?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শমসেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০৩:৫৫
Share:

সভার ভিড়। নিজস্ব চিত্র

সকাল থেকে ধুলিয়ান শহর ও শমসেরগঞ্জের কন্টেনমেন্ট এলাকাগুলোয় পুলিশ বেশ কড়া ব্যবস্থাই নিয়েছে। যদিও তার মধ্যেও টোটো, ঘোড়ার গাড়ি বিক্ষিপ্ত ভাবে চলাচলও করেছে। তবে সংখ্যায় যথেষ্ট কম। কিন্তু কন্টেনমেন্ট এলাকার বাইরে সচেতনতার প্রভাব তেমন ভাবে চোখে পড়েনি। বিশেষ করে, বিকেলে কন্টেনমেন্ট জ়োনের সামান্য বাইরে ধুলিয়ানের জৈন মোড়ে শাসক দলের জনসভা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। শাসক দলের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, প্রথমত সভা হয়েছে কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাইরে, দ্বিতীয়ত সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে ও মাস্ক পরেই মানুষ এসেছিলেন সভায়। কিন্তু ধুলিয়ানে বাসিন্দাদের বক্তব্য, এখন যখন এমনিতেই লোকসমাবেশ বারণ, তখন কেন এমন সভা? পুলিশও তখন নীরব দর্শক হয়েই দাঁড়িয়ে ছিল বলে দাবি। শুক্রবার পুলিশের এই ভূমিকায় হতবাক ধুলিয়ান শহরের বাসিন্দারা। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, কী হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

যদিও এতে দোষের কিছু দেখছেন না তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সহিদুল ইসলাম। বলছেন, “দূরত্ব বিধি মেনেই ছোট সভা করেছি আমরা। পুলিশের অনুমতি নিয়েছিলাম। মাস্ক পরে ছিলেন কর্মী ও বক্তারা সকলেই।”

অথচ, শুক্রবারও ৫ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় শমসেরগঞ্জ ব্লকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৭। অনুপনগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ছাড়াও আরও ২ জনের সংক্রমণের রিপোর্ট মিলেছে। শমসেরগঞ্জ থানাতে কর্মরত আর এক সিভিকেরও সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

Advertisement

শনিবার থেকে গোটা শমসেরগঞ্জ ব্লকে ৫ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে পুলিশের পরামর্শেই। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষিত হয়েছে শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড। আর তার থেকে ২০ মিটার দূরে সড়কের অপর পাড়ে জৈন কলোনির মোড়ে তৃণমূলের জমায়েত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলেই। এক হাইস্কুল শিক্ষক বলছেন, “শাসক দল তাদের বিবেক বোধ হারিয়ে ফেলেছে। যে পুলিশ সকালে রাস্তায় লোকজনকে দেখলেই তাড়া করে বেরিয়েছে, বিকেলে সেই পুলিশ ঘরে ঢুকে গিয়েছে। করোনার সঙ্গে এভাবে লুকোচুরি খেলার ফলেই শমসেরগঞ্জ জুড়ে এই ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”

এদিন সকালে পুলিশ ছিল বেশ কড়া মেজাজেই। ধমকেও কাজ হচ্ছে না দেখে ধুলিয়ান শহরে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে শমসেরগঞ্জ থানার পুলিশ। মাস্ক না পড়ার জন্য ৫ জনকে, ২ জন ব্যবসায়ীকে কন্টেনমেন্ট জ়োনে দোকান খোলার জন্য এবং ৩ জনকে বেড়া টপকে কন্টেনমেন্ট জ়োনে ঢোকার চেষ্টার জন্য ধরা হয়।

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তারিফ হোসেন জানান, হাসপাতালের কিছু কর্মী ও চিকিতসকের পরীক্ষা হয়েছে। সেগুলি নেগেটিভ মিললেও বৃহস্পতিবারও অনেকের লালারস নেওয়া হয়েছে । তার রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত আশঙ্কা কাটবে না। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার থেকে কয়েকদিন শমসেরগঞ্জের পুরো এলাকাকে ঠিক মতো লকডাউনে আনা গেলে আশা করছি সংক্রমণের ঘটনা অনেক কমবে।’’

শমসেরগঞ্জে কনটেনমেন্ট জ়োন রয়েছে শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড ও রতনপুর গ্রামে। দু’জায়গাতেই বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।

তবে পুলিশ ধুলিয়ান শহরে সকালের দিকে তৎপর থাকলেও বাসুদেবপুর, ভাসাই পাইকর শমসেরগঞ্জের দুই প্রান্তই ছিল আগের চেহারাতেই। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ বেরিয়েছে রাস্তায়, যানবাহন এমনকি লরিও ঢুকেছে ঝাড়খণ্ড থেকে। বাজার হাট, দোকান খোলা ছিল সবই। বেশির ভাগেরই মুখে ছিল না মাস্কের বালাই। ভাসাই পাইকরের প্রধান আব্দুর রউফ বলছেন, “শনিবার থেকে গোটা থানা এলাকা জুড়ে লকডাউন শুরু হবে। তাই লোকজনকে ঠেকাতে গেলে পুলিশকে এই এলাকাতেও টহল দিতে হবে। নচেত মানুষকে আটকানো যাবে না।” ধুলিয়ানের পুর প্রশাসক সুবল সাহা অবশ্য বলছেন, “পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে, শনিবার সকাল থেকে ব্লকের সমস্ত এলাকাতেই লকডাউন কার্যকরী করা হবে। এর জন্য পুলিশকে যতটা কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নিতে হবে। সব রকম ভাবে সহযোগিতা করা হবে পুলিশকে।” প্রাক্তন বিধায়ক ধুলিয়ানের তোয়াব আলিও লকডাউনের জন্য পুলিশি কড়া ব্যবস্থা জরুরি বলে মনে করলেও তার অভিযোগ, “চারিদিকে করোনা নিয়ে এত উদ্বেগ, আশঙ্কা সত্বেও শাসক দল তৃণমূল শহরের বুকে সভা করছে কিভাবে? এর আগেও তারা জমায়েত করেছে। পুলিশ এক্ষেত্রে নীরব দর্শক কেন? দু’চারটি রাস্তার লোককে গ্রেফতার করে করোনা ঠেকানো যাবে না সমস্ত ধরণের জমায়েত আটকাতে হবে পুলিশকে।”

জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “ধুলিয়ানে কোনও জমায়েত করার অনুমতি পুলিশ দেয়নি। তা সত্ত্বেও সভা কিভাবে হল আমি দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন