কখনও লক্ষ্য পুলিশ, কখন বিরোধী পক্ষ। মারমুখী ছাত্ররা। -নিজস্ব চিত্র
টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে মুর্শিদাবাদের সব কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বয়কট করল ছাত্র পরিষদ। নদিয়ার পলাশি কলেজে আবার এসএফআই সমর্থকদের সঙ্গে দফায়-দফায় পাথর ছোড়াছুড়ির মধ্যে ৩৫টি আসনের সব ক’টিতেই একতরফা মনোনয়ন জমা দিল টিএমসিপি।
কলেজ ভোটে গোলমাল পাকাবে না বলে কৃষ্ণনগরে সাবডিভিশনাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মুচলেকা দিতে যেতে বাধ্য হওয়ায় মঙ্গলবার, প্রথম দিনে মনোনয়ন জমা করতে যেতে পারেননি এসএফআই সমর্থকেরা। দ্বিতীয় এবং শেষ দিন বুধবার তাঁরা মিছিল করে কলেজের দিকে যেতেই গোলমাল বেধে যায়। রেললাইনের পাথর তুলে ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে যায়।
এসএফআইয়ের ছেলেদের ধাওয়া করে রেললাইন ধরে পলাশি স্টেশন পর্যন্ত চলে যায় টিএমসিপি-র লোকজন। কালীগঞ্জ থানার ওসি মানস চৌধুরী-সহ পাঁচ পুলিশকর্মী জখম হন। পুলিশ দু’রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়ে। এসএফআই এবং টিএমসিপি, দু’পক্ষেরই কয়েক জন ঘায়েল হয়েছেন। ডিওয়াইএফের সদ্যপ্রাক্তন জেলা সম্পাদক দেবাশিস আচার্যেরও মাথা ফেটেছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, কলেজের পাশে তৃণমূল কর্মীদের জমায়েত করা হয়েছিল। একটি বাড়িতে তাঁদের জন্য দুপুরের রান্নাও হয়। বুকে সবুজ ব্যাজ লাগিয়ে কলেজে ঢোকার মুখে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে অনেককেই। এ রকমই দু’জন সালাউদ্দিন মণ্ডল ও সুশান্ত হাজরা দাবি করেন, তাঁরা পথচারী মাত্র। বুকে সবুজ ব্যাজ কেন? প্রশ্ন শুনেই মুখ ঘুরিয়ে নেন তাঁরা।
এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি বাবুসোনা সরকারের অভিযোগ, “কলেজের গেট বন্ধ থাকায় আমাদের প্রার্থীরা ঢুকতে পারেনি। টিএমসিপি একতরফা মনোনয়ন জমা দিয়েছে।” টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অয়ন দত্ত অবশ্য দাবি করেন, “প্রার্থী না পেয়ে এসএফআই প্রলাপ বকছে।”
নদিয়ার মতো মুর্শিদাবাদেও ভোট আগামী ২৮ জানুয়ারি। ডোমকল ও ইসলামপুর কলেজে ছাত্র পরিষদ মনোনয়নপত্রই তুলতে পারেনি। সালার, পাঁচথুপি, লালবাগ, আমতলা ও বহরমপুর কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। কংগ্রেসের ছাত্র ও যুব শাখার জেলা কো-অর্ডিনেটর মোহনলাল রশিদ বলেন, ‘‘এ কারণে জেলার সব কলেজের নির্বাচন আমরা বয়কট করেছি।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যও অভিযোগ করেন, ‘‘পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে টিএমসিপি। ফলে, আমাদের ছেলেরা কোনও কলেজে মনোনয়পত্র জমা দিতে পারেনি।’’ টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি ভীষ্মদেব কর্মকার অবশ্য দাবি করেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরাই আসলে ওদের বয়কট করেছে। ওরা প্রার্থীই পায়নি।’’
জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু তাহের খানের অভিযোগ, তৃণমূলের গুন্ডারা আমতলা যতীন্দ্র রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র পরিষদ প্রার্থীদের পিটিয়ে মনোনয়পত্র কেড়ে নেয়। তার প্রতিবাদে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গীতালি বেরাকে ঘেরাও করে ছাত্র পরিষদ। ধাক্কাধাক্কিতে গীতালিদেবীর চশমার কাচ ভাঙে। দরজার পাল্লা, টেবিলের কাচও ভাঙে। একতরফা মনোনয়ন জমা হওয়ায় ওই সব কলেজে টিএমসিপি কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেই গিয়েছে। পলাশিতে বিজয় মিছিলও হয়েছে।