বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির মোট ৫১টি আসনের মধ্যে ৪৯টি আসনে জিতেও স্বস্তিতে নেই তৃণমূল।
বহরমপুরের দু’টি পঞ্চায়েতে ভোটাভূটি করে প্রধান নির্বাচনের পর বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ ঘিরেও গোষ্ঠী কোন্দল তীব্র হয়েছে। তবে দলীয় নেতৃত্ব তা সামাল দেওয়ার চেষ্টার কসুর করছেন না। ২৫শে সেপ্টেম্বর বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচনের দিন ঠিক হয়েছে। জেলা গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত দফতর সুত্রে জানানো হয়েছে এ বার বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদটি ওবিসি সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত। তৃণমূলের অন্দরের খবর, অনেক ঝাড়াই বাছাইয়ের পর শেষ পর্যন্ত তিন জন সভাপতি পদের দাবিদার। যার প্রথমেই রয়েছেন, রাজধরপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নগরাজোল এলাকার বাবু শেখের নাম। তবে দলেরই এক নেতা রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘বাবু শেখকে আবার মানতে নারাজ সুকুমার অধিকারী গোষ্ঠী। আবার এই দুই দাবিদারের মাঝেই শাহাজাদপুরের ইনামুল হকের নামও উঠে এসেছে। কার ভাগ্যে যে শিকে ছিঁড়বে, তা পঁচিশ তারিখই বোঝা যাবে।’’ দলের অন্দরের খবর ইমানুল আবের জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদের অন্যতম দাবিদার এবং লালবাগ মহকুমা তৃণমূল সভাপতি রাজীব হোসেনের স্নেহধন্য।
তবে, এই পরিস্থিতিতে তিন জনের কেউই এক ইঞ্চি জমি বিনা লড়াইয়ে ছাড়তে যে নারাজ, তিন গোষ্ঠীর মধ্যে ছোট-মেজ বিবাদেই তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁরা ইতিমধ্যেই নিজের গোষ্ঠীর সদস্যদের সমর্থন আদায়ে মরিয়া। তাই শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতেও যেতে নারাজ নন তাঁরা। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ব্যাপারে এগিয়ে নগরাজোলের বাবু শেখ। কারণ, একদা সিপিএমের ত্রাস বাবু এখন অনেক নেতারই নেকনজরে রয়েছেন। বাহুবলী এই নেতার উপর অনেকেই নির্ভরশীল। আর কে না জানে ভোট বৈতরণী পার করতে বাবু বাহিনীর জুড়ি মেলা ভার। তাই আডভ্যান্টেজ বাবু শেখ, মনে করছেন দলের নেতাদের অনেকেই।
তবে সুকুমার অধিকারীরা বাবু শেখকে মেনে নিতে যে নারাজ তা খোলাখুলিই বলছেন দলের একাংশ। সুকুমার অবশ্য সামনে বলছেন, ‘‘দল যাঁকে সভাপতি করবে তাকেই মেনে নেব।’’ তবে দলের অন্দরে অনেকেই মনে করছেন, বাবু সভাপতি হলে সাধারন মানুষ তৃণমূলকে সমর্থন করবে না। বহরমপুরের পুরনো এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘বুঝতেই তো পারছেন, সব কি ভেহে বলার দরকার হয়!’’
সুকুমার অধিকারী অভিজ্ঞ রজানীতিক ও প্রয়াত মান্নান হোসেনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁর সঙ্গে একদা কংগ্রেস এবং এখন তৃণমুলে সমবায়িকা চেয়ারম্যান পদে রয়েঠছেন। বহরমপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি (পূর্ব) আশিস সরকার বলেন, ‘‘সর্ব সম্মতভাবেই সভাপতি নির্বাচনের আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ তবে এক নেতার তির্যক মন্তব্য, ‘‘গাছ যেমন, ফল তো তেমনি হবেই। এখন দেখছি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবাই না জিতলেই ভাল হতো।’’
ঘাড়ের কাছে কংগ্রেস, সিপিএম নিঃশ্বাস ফেললে এমন কোন্দল যে হত না বলাই বাহুল্য। এ দিকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচন করতে তৃণমূল পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী ও জেলা তৃণমূল সভাপতি সুব্রত সাহা বহরমপুর মহকুমা তৃণমূল সভাপতি অরিত মজুমদারকে আহ্বায়ক নিযুক্ত করেছেন। অরিতের দাবি, ‘‘কিছুই চাপিয়ে দেওয়া হবে না। আলোচনা করেই সবাপতি নির্বাচন হবে।’’ তবে তিনি যে কে তা বলবে ২৫ সেপ্টেম্বর।