দলে ভাঙন কেন, বুঝতে চান রাজীব

নবান্নে ডেকে দলনেত্রী যতই বার্তা দিন, লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে যে ভাঙনের ইঙ্গিত মিলছে, তা রোখার টোটকা এখনও জানে না তৃণমূল।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share:

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নবান্নে ডেকে দলনেত্রী যতই বার্তা দিন, লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে যে ভাঙনের ইঙ্গিত মিলছে, তা রোখার টোটকা এখনও জানে না তৃণমূল। এই ভাঙন ঠেকানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তা স্বীকার করছেন দলের নবনিযুক্ত জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বুধবার তিনি বলেন, “কেন কেউ-কেউ আমাদের দল ছেড়ে বিজেপিতে যেতে চাইছে, সেটা আগে ভাল করে বুঝতে হবে।”

Advertisement

কিন্তু কাজটা যে সহজ নয়, তা বিলক্ষণ জানেন নেতারা। কারণ গোষ্ঠী কোন্দলে জেরবার জেলার বিভিন্ন এলাকা। বিশেষ করে রানাঘাট সাংগঠনিক জেলায় কোন্দল দীর্ঘদিনের। এত দিন সে ভাবে বিকল্প না থাকায় গোষ্ঠী রাজনীতির শিকার হয়েও কিছু নেতা দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে ছিলেন। লোকসভা ভোটের পরে বিজেপি প্রবল ভাবে উঠে আসায় তাঁরাও গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন। একদা এই জেলায় তৃণমূলের সর্বময় কর্তা ছিলেন মুকুল রায়। ছোট-বড় প্রতিটি নেতার নাড়িনক্ষত্র জানেন তিনি। জানেন, কোন নেতা কী কারণে কার উপরে ক্ষুব্ধ। সেই মতো তিনি যোগাযোগ রেখে চলছেন। বিজেপির এক জেলা নেতার কথায়, “মাটি তৈরি হয়েই ছিল। আমরা সেটাকে কাজে লাগাচ্ছি মাত্র। তৃণমূলের অস্ত্রেই আমরা ওদের বধ করব।”

সোমবার নবান্নে রাজ্যের সমস্ত দলীয় বিধায়ক ও সাংসদদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি মূলত চারটি বিষয়ের উপরে জোর দিয়েছেন। এক, বিধায়কদের আরও গভীর ভাবে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে হবে। জনসংযোগ বাড়াতে হবে। দুই, নিজের এলাকার সরকারি প্রকল্পে উন্নয়নমূলক কাজ তদারকি করবেন বিধায়কেরা, যাতে কাজ ঠিক ভাবে ও দ্রুত সম্পন্ন হয়। তিন, কোনও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। চার, দলের যে পুরনো নেতারা নানা কারণে সরে গিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগযোগ করে আবার মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে।

Advertisement

ওই বৈঠকের পরেই জেলার এক বিধায়ক বলেন, “বোঝাই যাচ্ছে, ভোটে দলের বিপর্যয়ের কারণ হিসাবে নেত্রী ওই চারটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন। প্রথম তিনটি বাস্তবায়িত করা গেলেও যাঁরা সরে গিয়েছেন তাঁদের ফিরিয়ে আনা কিন্তু কঠিন। অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে।”

তাঁর কথা যে একেবারে অমূলক নয়, তার ইঙ্গিত মিলছে রানাঘাটে এক প্রাক্তন ব্লক সভাপতি-সহ কিছু নেতা বিজেপির দিকে পা বাড়ানোয়। বহু দিন ধরে দলে কোণঠাসা হয়ে থাকা আরও কয়েক জন নেতা বিজেপিতে যাওয়া প্রায় পাকা করে ফেলেছিলেন। দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শঙ্কর সিংহ তাঁদের কোনও মতে আটকালেও সেই প্রবণতা পুরোপুরি রোখা শক্ত।

রাজীবের দাওয়াই, “যাঁদেরই দল ছাড়ার সম্ভাবনার কথা শোনা যাবে, তাঁদের সঙ্গেই কথা বলতে হবে। বুঝতে হবে, কেন তাঁরা ছেড়ে যেতে চাইছেন। সেই জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তা হলেই দল ছাড়ার প্রবণতা বন্ধ হবে।” দলে অস্থিরতার অন্যতম কারণ যে গোষ্ঠী কোন্দল, সে প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, “দলে আমার লোক বলে আর কেউ থাকবে না। সবাইকে এক ছাতার তলায় আসতে হবে। কোনও তালেবর নেতা থাকবে না।”

ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীবের দাবি, তিনি নিজে মাটি কামড়ে পড়ে থাকবেন নদিয়ায়। ১৫ জুন পুরপ্রধান ও পঞ্চায়েত প্রধান স্তরের নেতাদের নিয়ে কৃষ্ণনগরে গোটা নদিয়া জেলার বৈঠক করবেন। তারপর একে একে রানাঘাট, কল্যাণী, কৃষ্ণনগর ও তেহট্ট মহকুমা নিয়ে বৈঠক করবেন। তার পর নামবেন ব্লক স্তরের বৈঠকে।

প্রশ্ন একটাই, রাজীব আর তাঁর সহকর্মীরা ফুটোফাটা মেরামত করার জন্য ঠিক কতটা সময় পাবেন? আর, বিজেপিও তো গোটা সময়টা ঘুমিয়ে থাকবে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন