চাপড়ার পঞ্চায়েত

সমুদ্র ভ্রমণের পরে বিনা বাধায় দখল

টানা সাত দিন দিঘায় কাটিয়ে আসার পর প্রত্যাশা মতোই অনাস্থার পক্ষে ভোট দিলেন কংগ্রেস ও সিপিএম থেকে চলে আসা পঞ্চায়েত সদস্যরা। ফলে কোনও রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই চাপড়ার চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করল তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৬ ০৭:৪০
Share:

টানা সাত দিন দিঘায় কাটিয়ে আসার পর প্রত্যাশা মতোই অনাস্থার পক্ষে ভোট দিলেন কংগ্রেস ও সিপিএম থেকে চলে আসা পঞ্চায়েত সদস্যরা। ফলে কোনও রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই চাপড়ার চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করল তৃণমূল।

Advertisement

১৩ জুন চাপরা ব্লকের সিপিএম পরিচালিত বৃত্তিহুদা, আলফা, বাগবেরিয়া, চাপরা-২ ও কলিঙ্গ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিল তৃণমূল। অনাস্থায় সই করেছিলেন ওই পঞ্চায়েত গুলির একাধিক সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপির সদস্যরা। সেই মতো ওই পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৫ জন সদস্যকে নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব ওই দিন রাতেই পাড়ি দিয়েছিল দিঘা। চারটি হোটেলের ৬৩টি ঘর ভাড়া করে সপরিবারে তাঁদের রাখা হয়েছিল সেই হোটেলে। কোনও কোনও সদস্যের সঙ্গে ছিলেন একাধিক অনুগামীও। রাজকীয় ভাবে তাঁদের এই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি এসি গাড়ি করে তাঁদের ঘোরার ব্যবস্থাও করা হয়। শোনা যাচ্ছিল শর্ত ছিল একটাই, ফিরে এসে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট দিতে হবে।

সেই মতো বৃহস্পতিবার সকালে কলিঙ্গ গ্রাম পঞ্চায়েত বাদ দিয়ে বাকি চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের নিয়ে চাপড়ায় ফিরে আসেন তৃণমুল নেতারা। কারণ ওই পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যে কলিঙ্গ গ্রাম পঞ্চায়েতের অনাস্থা ভোট ২৭ জুন। ওই পঞ্চায়েতের সদস্যরা এখনও দিঘায় রয়ে গিয়েছেন। তাঁদের নিয়ে আসা হবে আগের দিন। ২৬ জুন রাতে। এ দিন অবশ্য নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেই সদস্যরা প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই ভোটাভুটিতে হাজির ছিলেন না বিরোধীরা। ফলে এক তরফা ভাবেই এ দিন চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিয়ে প্রধানদের অপসারণ করতে সক্ষম হয় তৃণমূল।

Advertisement

বৃত্তিহুদা গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা ২২ জন। সিপিএমের ছিল ১২ জন আর কংগ্রেসের ছিল ১০। এ দিন কংগ্রেসের ৯ জন ও সিপিএমের ৫ জন অনাস্থার পক্ষে ভোট দেন। আলফা গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫ জন। সিপিএমের ছিল ১০ জন আর কংগ্রেসের ছিল ১ জন ও তৃণমূলের ছিল ৪ জন। এ দিন কংগ্রেসের ১ জন ও সিপিএমের ৪ জন ও তৃণমূলের ৪ জন অনাস্থার পক্ষে ভোট দেন। চাপড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। সিপিএমের ছিল ৬ জন আর বিজেপির ছিল ৫ জন, তৃণমূলের ছিল ৩ জন। এ দিন বিজেপির ১ জন ও সিপিএমের ৬ জন ও তৃণমূলের ২ জন অনাস্থার পক্ষে ভোট দেন। বাগবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা ১৩ জন। সিপিএমের ছিল ৯ জন আর তৃণমূলের ছিল ৪ জন। এদিন তৃণমূলের ৪ জন ও সিপিএমের ৫ জন সদস্য অনাস্থার পক্ষে ভোট দেন।

আর এই ফলই বলে দিচ্ছে তৃণমূলের দিঘা অভিযান কতটা সফল। চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমান বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ আগেই বিধানসভা ভোটে তাঁদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন। সেই রায়কে সম্মান জানিয়েই ওই সদস্যরা আমাদের দলে যোগ দিয়ে প্রধানদের অপসারিত করল। এতে সেই মানুষেরই জয় হল।’’

যদিও সিপিএমের দাবি এই দলবদল সম্পুর্ণ অনৈতিক লেনদেনের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। সিপিএমের চাপড়া জোনাল কমিটির সাধারণ সম্পাদক হেকমত আলি মন্ডল বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ অনৈতিক ভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থের জায়গা থেকে এই দলবদল। আর যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে অনাস্থা ভোটের বিরোধিতা করতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হত বলেই আমাদের কেউ যায়নি। একই দাবি করেছে কংগ্রেসও। এখনও পর্যন্ত সিপিএমের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখল করতে বাকি আছে। তার মধ্যে কলিঙ্গ পঞ্চায়েতের অনাস্থার দিন ২৭ জুন। চাপড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েত সময়ের অপেক্ষায়। আর মহপুর দখলের জন্য নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল। আগেই সিপিএমের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন একেবারে বিরোধী শূন্য অবস্থায় করতে দাবি তৃণমূল নেতাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন