আজ গ্রামে ফিরছেন কফিন-বন্দি রাধাপদ

টানা পাঁচ দিন পরে বুধবার দুপুরে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে শেষ কথা বলেন তিনি। স্ত্রী জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে যাবেন, ঠিক তার আগেই ফোন কেটে যায়।

Advertisement

‌‌‌নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমপুর শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৯
Share:

শোক:  নাজিরপুরের বাড়িতে বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

টানা পাঁচ দিন পরে বুধবার দুপুরে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে শেষ কথা বলেন তিনি। স্ত্রী জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে যাবেন, ঠিক তার আগেই ফোন কেটে যায়।

Advertisement

সন্ধ্যায় জম্মু ও কাশ্মীর থেকে খবর আসে, সাম্বা সেক্টরে পাক স্নাইপারের গুলিতে নিহত হয়েছেন বিএসএফের ১৭৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল রাধাপদ হাজরা। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর কফিনবন্দি দেহ এসে পৌঁছয় কলকাতা বিমানবন্দরে। সেখান থেকে নাজিরপুরের বাড়ি ও পরে রেজিনগরে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

আদতে মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের বাসিন্দা হলেও রাধাপদ পরে ভাড়া থাকতেন নদিয়ার করিমপুরে। সম্প্রতি তেহট্টের নাজিরপুরে জমি কিনে বাড়ি করেন। মাস আটেক হল, সেখানেই থাকছিলেন। স্ত্রী সুজাতা ছাড়া বাড়িতে আছেন একুশ বছরের মেয়ে রাজেশ্বরী ও বছর আঠারোর ছেলে রাহুল। গত ২৭ অক্টোবর শেষ বাড়ি এসেছিলেন। ছুটি শেষে ২২ নভেম্বর কাশ্মীরে গিয়ে কাজে যোগ দেন। আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া হীরানগর সাব সেক্টরে চাক দুলমা পোস্টে ছিলেন তিনি।

Advertisement

রাহুলের কথায়, “সীমান্তে সমস্যা চলায় বাবা ক’দিন ফোন করতে বারণ করেছিলেন। সেই জন্যই দিন পাঁচেক বাবার সঙ্গে কারও কথা হয়নি।” বিএসএফের তরফে তাঁদের জানানো হয়েছে, বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ রাধাপদর পেটে গুলি লাগে। হাসপাতালে ৫টা ২০ নাগাদ চিকিৎসকেরা তাঁকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন। সন্ধে সাতটা নাগাদ নাজিরপুরের বাড়িতে ফোন করে সেই খবর দেওয়া হয়। তার পর থেকেই টানা কেঁদে চলেছেন সুজাতা। মাঝে-মাঝে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। আত্মীয়-পড়শিরা এসে ভিড় করে রয়েছেন।

পরিবার সুত্রে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে রেজিনগরের হাটপাড়ায় জন্ম রাধাপদর। ১৯৯১ সালে বিএসএফে চাকরি মেলে। টানা বাইরে থাকতে হত বলে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য ২০০৮ সালে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে তিনি করিমপুরে বাসা নেন। তার পর নাজিরপুর। রাজেশ্বরী এখন জঙ্গিপুর হাসপাতালে নার্সিং প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। রাহুল নাজিরপুর বিদ্যাপীঠের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। আগেও দু’বার জম্মু ও কাশ্মীরে পোস্টিং হয়েছিল রাধাপদর। এক বার পায়ে গুলিও লাগে। দেড় বছর আগে আবার সেই কাশ্মীর। বাড়ির লোকেরা বারবার অবসর নিতে বললেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কথা ভেবে তিনি চাকরি ছাড়েননি। ছেলের উচ্চ মাধ্যমিকের সময়ে ছুটি পেলে বাড়ি আসবেন বলে গিয়েছিলেন। রাধাপদর মা অম্বিকা হাজরা বলেন, ‘‘ছেলের এই চাকরিতে প্রথম থেকেই বাড়ির কারও মত ছিল না। কিন্তু ও ছোট থেকেই খুব সাহসী ছিল। শেষ পর্যন্ত জীবন দিতে হল! আমার মতো আর কোনও মায়ের কোল যেন খালি না হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন