হেনস্থায় অভিযুক্ত টোটো চালক

ভাড়া দিয়ে ওষুধ নিয়ো

ফেরার পথে তাই টোটোর ভাড়া মেটাতে পারেননি। আর, তাই মিনতির ওষুধ কেড়ে নিয়ে তাঁকে ‘শাস্তি’ দিয়েছে ওই টোটো চালক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০১:১৮
Share:

কান্না: মিনতিদেবী। নিজস্ব চিত্র

সাকুল্যে কুড়ি টাকা সঙ্গে ছিল তাঁর।

Advertisement

দাঁতে অসহ্য ব্যাথা, আর পারা যাচ্ছিল না। ময়লা দু’টো দশ টাকার নোট সঙ্গে নিয়েই শক্তিনগর হাসপাতালের বাস ধরেছিলেন মিনতি মণ্ডল। তবে, বাস ভাড়া দিয়ে ফুরিয়ে গিয়েছিল সেটুকুও।

ফেরার পথে তাই টোটোর ভাড়া মেটাতে পারেননি। আর, তাই মিনতির ওষুধ কেড়ে নিয়ে তাঁকে ‘শাস্তি’ দিয়েছে ওই টোটো চালক।

Advertisement

স্থানীয় পথ চলতি মানুষ অবশ্য তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন পুলিশের কাছে। অভিযোগ দায়ের হলেও, শনিবার সন্ধে পর্যন্ত সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে ওই টোটো চালককে শনাক্ত করা যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য টাকা তুলে মিনতির হাতে তুলে দেওয়ায়, নবদ্বীপের মাঠপাড়ায় ফিরেছেন তিনি।

কৃষ্ণনগর জুড়ে টোটোর দৌরাত্ম্য নতুন ঘটনা নয়। ভাড়া নিয়ে বচসার জেরে যাত্রী হেনস্তা, মাঝ পথে মহিলা যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া— তাদের দাপটের নানান নজির ছড়িয়ে রয়েছে।

তবে, এর উল্টো ছবিও রয়েছে। খোয়া যাওয়া টাকার ব্যাগ যাত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়া টোটো চালকও ব্যতিক্রম নন পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদে। দিন দুয়েক আগের ঘটনা, নওদার ঝাউবোনায় বাজারে নেমেই ওয়াজেদ শেখ দেখেছিলেন ব্যাগটা পড়ে গিয়েছে রাস্তায়। রাস্তায় খুঁজতে বেরিয়েছিলেন তিনি।

ফিরতি পথে ঝাউবোনার ওই টোটো চালক নাজমুল শেখ দেখেন, রাস্তায় পড়ে রয়েছে সাদা প্লাস্টিক মোড়া ব্যাগ। সেই ব্যাগ নিয়ে বাজারে এসে ওয়াজেদকে তা ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন নাজমুল।

গ্রামে শাড়ি ফেরি করেন মিনতি। কোনওরকমে সংসার চলে তাঁর। এ দিন শক্তিনগরে এসে ডাক্তার দেখিয়ে হেঁটেই ফিরছিলেন বাস স্ট্যান্ডে। বলছেন, ‘‘ভেবেছিলাম, বাস স্ট্যান্ডে চেনা কাউকে পেয়ে গেলে বাস ভাড়াটুকু চেয়ে নেব।’’ আচমকাই একটা টোটো এসে দাঁড়ায়, বলে ‘বাস স্ট্যান্ড তো, উঠে আসুন!’ মিনতি উঠে পড়েন। আর বাস স্ট্যান্ডে নামতেই বাধে বিপত্তি। মিনতি বলেন, ‘‘কোনও কথাই শুনতে চাইছিল না ওই টোটোচালক। শেষ পর্যন্ত আমার হাতের ওষুধের প্যাকেটটা কেড়ে নিয়ে বলে, ভাড়া মিটিয়ে ব্যাগ নিয়ে যেও!’’

কৃষ্ণনগর পুসভায় এখন প্রায় সাড়ে চোদ্দশো টোটো চলে। কৃষ্ণনগর টোটো ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সম্পাদক তপন কুন্ডু বলেন,“ওই টোটো চালকে চিহ্নিত করা কঠিন। তবুও আমরা প্রত্যেকটি স্ট্যান্ডে তার চেহারার বর্ণনা দিয়ে বলে রেখেছি।’’ চেষ্টা পুলিশও করছে। হাসপাতালের সামনে সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখা হচ্ছে।

কিন্তু হারানো সেই মানবিকতার খোঁজ মিলবে কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন