বিয়েবাড়িতে ঝুমুর নেচেই জোটে পড়ার খরচ 

সানাই কিংবা ব্যান্ডের পাশাপাশি বিয়েবাড়িতে জনপ্রিয় হচ্ছে আদিবাসীদের ঝুমুর নাচ। 

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

 করিমপুর  শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩২
Share:

তালে তালে। নিজস্ব চিত্র

সানাই কিংবা ব্যান্ডের পাশাপাশি বিয়েবাড়িতে জনপ্রিয় হচ্ছে আদিবাসীদের ঝুমুর নাচ।

Advertisement

এক সময়ে বিশেষ কোনও অনুষ্ঠানে এই নাচ দেখা গেলেও এখন সীমান্তবর্তী বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও মানুষের মন কেড়েছে এই নাচ। কখনও পুজোর শোভাযাত্রায়, আবার কখনও বিয়েতে দেখা যাচ্ছে ধামসা-মাদলের বাজনায় এক ঝাঁক মেয়েদের এই নাচ।

এই ঝুমুর নাচ যে শুধুমাত্র মানুষের মনোরঞ্জন করছে, তা-ই নয়, অর্থের সংস্থান করছে পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদেরও। গত দুই-তিন বছরে ঝুমুর নাচের চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন হোগলবেড়িয়ার চরমেঘনার ঝুমুর শিল্পীরা।

Advertisement

দলের এক সদস্য শুভেন্দু বিশ্বাস জানান, গ্রামের প্রায় সকলেই মূলত দিনমজুর। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারেন না। তাই এক দিকে নিজেদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে, অন্য দিকে, পড়ার খরচের টাকার সংস্থান করতে নতুন করে একটি দল তৈরি করা হয়েছে। যে দলের প্রায় কুড়ি জন সদস্য। তাদের মধ্যে নবম শ্রেণির পড়ুয়া থেকে কলেজ

পড়ুয়ারা রয়েছে।

শুভেন্দু বলেন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এখন বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচের জন্য আমাদের দলের প্রচুর বায়না হচ্ছে। আগামী ফাল্গুন মাস অবধি অনেকগুলি বিয়ের দিনে নাচের বায়না হয়ে গিয়েছে। পড়া ও বাড়ির কাজের ফাঁকে ফাঁকে তার অনুশীলনও চলছে।”

ঝুমুর দলের সদস্য নবম শ্রেণির মধুমিতা মণ্ডল ও করিমপুর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী বনশ্রী মণ্ডলেরা জানাচ্ছেন তাদের অভিজ্ঞতা বেশ ভাল। বনশ্রী বলেন, “অনেক দিন আগে পাড়ার দিদিরা এই নাচ করত। এখন বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাদের এই নাচ খুব জনপ্রিয় হয়েছে। বিয়ের মরসুমে অনেক বাড়ি থেকে বায়না এসেছে। আমাদের অনেক শারীরিক কসরত করতে হয়, কিন্তু নাচ থেকে রোজগার হওয়া পয়সা আমাদের খুব কাজেও লাগে।’’

ওই পড়ুরায়া জানিয়েছে, গত দু’দিন আগেও একটি বিয়েবাড়িতে তিন ঘণ্টা ঝুমুর নাচের জন্য ভাল টাকা পেয়েছে তারা।

জানা গেল, এক-একটি অনুষ্ঠান শেষে প্রতি জন সদস্য প্রায় সাতশো-আটশো টাকা পায়। যা দিয়ে ওই পড়ুয়ারা তাদের পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে সংসারেও সাহায্য করতে পারে।

সোমবার তেহট্টের বেতাইয়ের একটি বিয়েবাড়িতে ঝুমুর নাচতে এসেছিল পূর্ব বর্ধমানের পারুলিয়ার একটি দল। ওই দলের সদস্য নবকুমার সর্দার জানান, বর্তমানে অন্নপ্রাশন ও বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানে দিন দিন এই ঝুমুর নাচের প্রচলন বাড়ছে। দুই বর্ধমান জেলার পাশাপাশি নদিয়া, বীরভূম, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা সহ বিভিন্ন জেলায় তাঁদের দল অনুষ্ঠান করছে।

তেহট্টের বাসিন্দা অখিলচন্দ্র সরকার বলেন, “বর্তমানে কোনও কোনও বিয়েতে পুরনো দিনের পালকি কিংবা গরুর গাড়ির ব্যবহার হয়, দেখি। এখন নতুন সংযোজন এই ঝুমুর নাচ। এ বছরে অনেক বিয়েতেই জল সাজতে এই ঝুমুর নাচ দেখলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন