দীর্ঘ দিনের সেই চেনা জট। আর তার জেরেই এ বার লরির ধাক্কায় প্রাণ গেল এক ব্যক্তির। সোমবার গভীর রাতে বেলডাঙার ঘটনা।
প্রতি মঙ্গলবার বেলডাঙায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর কাপড়ের হাট বসে। একই দিনে জাতীয় সড়কের ধারে বসে পশু হাট। সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার প্রায় সারাদিনই জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ থাকে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, একদিকে যানজট এবং তার কারণে মাঝে মধ্যেই গাড়ির বেপরোয়া গতি বিপদ ডেকে আনে। সোমবারের দুর্ঘটনার পর এলাকার বাসিন্দারা জাতীয় সড়ক লাগাতার অবরোধের হুমকি দিয়েছে। প্রশাসনের বক্তব্য, হাটের জন্য জাতীয় সড়ক থেকে দূরে স্থায়ী জায়গা না করা পর্যন্ত সমস্যা মিটবে না।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম রশিদ শেখ (৪৫)। বাড়ি মারকাজ মসজিদ পাড়ায়। তাঁর স্ত্রী নাসমা বিবি জানান, সোমবার রাতে সে বাড়ির বারান্দায় শুয়েছিল। মঙ্গলবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে জাতীয় সড়কের দিকে গিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরেই তাঁর দুর্ঘটনার খবর আসে। অনেকেই দেখেছেন, জানজটের মধ্যেই দ্রুত যেতে গিয়ে একটি লরি তাঁকে ধাক্কা মারে।
ফি মঙ্গলবার এমনিতেই হাটে প্রচুর মানুষের ভিড় হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হাট মঙ্গলবার হলেও বিভিন্ন জায়গা থেকে সোমবার রাত থেকেই ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করে। মঙ্গলবার ছিল পুজোর আগে শেষ হাট। ফলে, এদিন মাত্রাতিরিক্ত ভিড় হয়েছিল। প্রশাসনের ধারণাও ছিল না যে বাইরে থেকে এত ব্যবসায়ী আসবেন। জাতীয় সড়ক ছাড়িয়ে শহরেও অস্থায়ী দোকান বসে পড়ে।
বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা যে লরিগুলিতে মালপত্র এনেছিলেন, সেগুলি জাতীয় সড়কের ধারে ছিল। অন্যদিকে শ’য়ে শ’য়ে দোকান, আর হাজার ক্রেতা। একদিকে কাপড়ের হাট, অন্যদিকে পশু হাট। ফলে মঙ্গলবার বেলা বাড়তেই ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরো তালগোল পাকিয়ে যায়। পুলিশষ নামিয়েও পরিস্থিতি আয়ত্ত্বে আনা যায়নি।
সকালের দুর্ঘটনার পর এলাকা এমনিতেই তেতে ছিল। তার পরে জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় জনতা রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সুজিয়ে সরিয়ে দেয়। তারা হুমকি দেয়, এমনটা চললে তারা টানা অবরোধ শুরু করবে।
বেলডাঙা মারকাজ মসজিদ কমিটির সম্পাদক আরফাত শেখ বলেন, ‘‘এই এলাকায় প্রচুর বাড়ি আছে। সঙ্গে আমাদের মসজিদ। গাড়ি আস্তে চালানোর জন্য বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হাটের জট থেকে কোনও রকমে রাস্তা একটু ফাঁকা পেলেই যানবাহন বেপরোয়া গতিতে ছুটতে থাকে। তার ফলেই মাঝে মধ্যেই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। তাঁদের দাবি, পুলিশ গার্ড রেলিং দিয়ে গাড়ি গতি নিয়ন্ত্রন করুক।
বেলডাঙা-১ ব্লকের বিডিও শুভ্রাংশু মণ্ডল জানান, হাট নিয়ে সমস্যা রয়েছে। কিন্তু, প্রতি মঙ্গলবার এই অবস্থা হয় না। পুজোর মুখে বলে এদিন অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘আগামী দিনে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তা আমরা দেখব।’’ বেলডাঙা পুরসভার পুরপ্রধান ভরত ঝাওর জানান, জাতীয় সড়কের ধার থেকে হাট সরিয়ে কোনও স্থায়ী জায়গায় না নিয়ে যাওয়া হলে সমস্যা মিটবে না। গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী বহরমপুর এসেছিলেন। তখন তাঁর কাছে সেই আবেদন পেশ করেছি। এদিন হাটের জন্য সামান্য ৫০০ মিটার রাস্তা পেরতে আমাকে ৪৫ মিনিট সময় লেগেছে। ওসি মৃনাল সিংহ জানান, থানার সব পুলিশ কর্মীকে নামানো হয়েছিল। তা না হলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেত। .