বেহাল পরিবহণ-পরিকাঠামো

যোগাযোগ মূল সমস্যা কল্যাণীতে

গত ১০ বছরে শহরে জনসংখ্যা বা অন্য সুবিধা যে হারে বেড়েছে, শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা ১০ বছর আগেই পড়ে রয়েছে। বলার মধ্যে কেবল চালু হয়েছে টোটো। বিভিন্ন পেশার মানুষদের অভিযোগ, শহরে সুসংহত কোনও পরিবহণ ব্যবস্থা এখনও চালু করা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০১:১৯
Share:

আড়ে-বহরে বাড়ছে শহর। মূল শহরে তো বটেই শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তিন-তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আন্তর্জাতিক মানের আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মেডিক্যাল কলেজ তো রয়েছেই, তৈরি হচ্ছে এইমস-ও। ফলে শহর কল্যাণীতে বাড়ছে বাসিন্দার সংখ্যা। আশপাশের শহরের চাকুরেরা তো বটেই, কলকাতায় চাকরি করেন এমন অনেকেই কল্যাণীকে বেছে নিচ্ছেন। শহরে ফ্ল্যাটবাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে।

Advertisement

গত ১০ বছরে শহরে জনসংখ্যা বা অন্য সুবিধা যে হারে বেড়েছে, শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা ১০ বছর আগেই পড়ে রয়েছে। বলার মধ্যে কেবল চালু হয়েছে টোটো। বিভিন্ন পেশার মানুষদের অভিযোগ, শহরে সুসংহত কোনও পরিবহণ ব্যবস্থা এখনও চালু করা যায়নি। ফলে রাতবিরেতে তো বটেই, ভর দুপুরে বেশ কিছু এলাকায় যাওয়ার কোনও যানবাহন মেলেনা।

বারাসতের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন শেফালি বিশ্বাস। চাকদহের একটি গ্রামের বাসিন্দা শেফালি বছর দুয়েক হল কল্যাণী পিকনিক গার্ডেনের দিকে বাড়ি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, স্টেশনে আসার জন্য সব সময়ে যানবাহন মেলে না। টোটো থাকলেও বৃষ্টির দিনে অনেতে যেতে চান না, আবার গেলেও ইচ্ছা মতো ভাড়া হাঁকেন। বাড়ির মায়া ত্যাগ করে এখন ‘এ’ ব্লকে, রেল স্টেশনের কাছাকাছি ফ্ল্যাট খুঁজছেন তিনি। তাঁর বাগানের গাছের পাতা পাশের বাড়িতে পড়ে বলে পড়শিরা হরিণঘাটার সত্তরোর্ধ্ব বিকাশ দেবনাথকে প্রায়ই হেনস্থা করেন। অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত তিনি কল্যাণীর মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের কাছে মঙ্গলবার অভিযোগ জমা দিতে এসেছিলেন। এসডিপিও-র অফিস সীমান্ত এলাকায়। মাঝেমধ্যে দু’একটি বাস গেলেও তাদের সময়ের ঠিক নেই। এ ছাড়া আর কোনও যান পাননি তিনি। পরবল বৃষ্টির মধ্যে অসহায় বৃদ্ধ যাকে পাচ্ছেন, তাঁকেই জিজ্ঞাসা করছেন কী ভাবে যাবেন। কয়েকটি টোটো যেতে রাজি হলেও, কেউ ২০০ টাকা, কেউ তারও বেশি ভাড়া চায়। শেষ পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য ৩০০ টাকায় টোটো ভাড়া করে এসডিপিও অফিসে গিয়ে চিঠি জমা দেন তিনি।

Advertisement

এ ব্লকেই রয়েছে ট্রিপল আইটি। রয়েছে একটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি ইঞ্জনিয়রিং কলেজ। প্রচুর পড়ুয়া এই এলাকায় থাকেন। তাঁদের প্রত্যেকেরই অভিযোগ, সন্ধ্যার পরে রেল স্টেশনের দিকে কোনও কাজে গেলে আর ফেরা নিয়ে প্রচুর সমস্যায় পড়তে হয়। টোটো থাকলেও তারা খেয়ালখুশি মতো ভাড়া চায়। শহরের বাসিন্দাদের দাবি সিটি সার্ভিস যানবাহন চালু হোক কল্যাণীতে। দুর্গাপুর বা বর্ধমান শহরে এই ধরণের প্রচুর যানবাহন রয়েছে।

পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যার কথা মেনে নিয়ে কল্যাণীর পুরপ্রধান সুশীল তালুকদার বলেন, ‘’গত কয়েক বছরে অটো-টোটো প্রচুর বেড়েছে। কয়েকটি রুটও চালু হয়েছে। কিন্তু কিছু এলাকায় সমস্যা রয়ে গিয়েছে। টোটো বন্ধ হয়ে এ বার ই-রিকশা চালু হবে। আমরা তখন সেগুলির জন্য রুট ভাগ করে দেব। আর তা ছাড়া আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে নতুন রুট চালুর চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন