চাঁই ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে মিছিল রঘুনাথগঞ্জে।ছবি: গৌতম প্রামাণিক
তফসিলি সম্প্রদায়ের সরকারি স্বীকৃতি জুটেছে আগেই। এবার চাঁই ভাষাকে অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে পথে নামলেন ওই সম্প্রদায়ের লোকজন। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসে রঘুনাথগঞ্জে পথে নামেন চাঁই সম্প্রদায়ভুক্ত কয়েক হাজার মানুষ। এঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশই ছিলেন মহিলা।
সাম্প্রতিককালে এত বড় জমায়েত দেখেনি রঘুনাথগঞ্জ। তা-ও আবার কোনও ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে। রাজ্য চাঁই সমাজ উন্নয়ন সমিতির দাবি, এ রাজ্যে প্রায় ৩০ লক্ষ চাঁই ভাষাভাষী মানুষ রয়েছেন। এঁদের মধ্যে মুর্শিদাবাদ ও মালদহে বাস করেন অন্তত ২০ লক্ষ জন। ২০০২ সালে চাঁই সম্প্রদায়কে তফসিলি সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাঁওতালি ভাষার মতো সরকারি ভাষার মান্যতা পাইনি ওই ভাষা। সমিতির রাজ্য সম্পাদক ভরতচন্দ্র মণ্ডল জানান, চাঁই সম্প্রদায়ভুক্তদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও কৃষ্টি রয়েছে। তাঁরা নিজেদের মধ্যে চাঁই ভাষাতেই কথা বলেন। তাঁদের সমাজে জীবনযাপনের নিজস্ব নিয়ম, পদ্ধতি রয়েছে। বহু লড়াই করে তফশিলি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হতে পারলেও চাই ভাষা আজও সরকারি স্বীকৃতি পাইনি। সেই কারণেই এদিন তাঁরা আন্দোলনে নামলেন বলে ভরতবাবু জানান।
এদিনের জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন লালগোলার বাউসমারির বাসিন্দা রাসবিহারী সরকারও। তিনি বললেন, “আমরা নিজেদের সম্প্রদায়ের লোকজনেরা চাঁই ভাষাতেই কথা বলি। কিন্তু এই ভাষা কথ্য ভাষা হিসেবেই চালু রয়েছে। এই ভাষার কোনও হরফ নেই। বিয়ের গান নানা সামাজিক উৎসবে বাজে চাঁই সমাজে। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে সে সব ভুলে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। এই ভাষা যদি সরকারি স্বীকৃতি পায়, তবেই একমাত্র তা সুরক্ষিত হবে।” দ্বীপচর গ্রামের কুলজা মণ্ডল বললেন, ‘‘বাংলা ভাষায় লেখাপড়া করলেও বাড়িতে নিজেদের মধ্যে আমাদের সমস্ত কথাবার্তা হয় চাঁই ভাষায়। একদিন কথ্য ভাষা হিসেবে হারিয়ে যাবে চাঁই ভাষা।’’ এদিন রঘুনাথগঞ্জের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে মিছিল পৌঁছয় জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসকের দফতরে। সেখানে ভাষার স্বীকৃতি চেয়ে আবেদনপত্রও জমা দেন তাঁরা।