মুর্শিদাবাদের ৬টি পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল তৃণমূল।
শুক্রবার কান্দি, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, বেলডাঙা, মুর্শিদাবাদ, ধুলিয়ান এবং জঙ্গিপুর পুরসভার যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে শাসক দল তাতে বিশেষ চমক নেই, নেই দলের অন্দরে তেমন কোনও ক্ষোভও।
দলীয়-কোন্দল দীর্ণ তৃণমূলে প্রার্থী তালিকা কোনওরকম গণ্ডগোল ছাড়াই উতরে যাওয়ায় কংগ্রেসের কটাক্ষ, মুর্শিদাবাদে দাঁত ফোটানোর মতো জমি যে তৃণমূল এখনও তৈরি করতে পারেনি তা দলের নেতা-কর্মীরা জানেন। তাই প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে থাকতে চাননি অনেকেই। যার নিট ফল, প্রার্থী তালিকা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই দলে। বামেরাও একই সুরে এ দাবি সমর্থন করেছে। তবে ঘোষিত পুরসভাগুলির বেশ কয়েকটি যে বামেদের দখলেও যেতে পারে সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না কংগ্রেসও।
কংগ্রেস ও বামেরা তৃণমূলকে অন্তত মুর্শিদাবাদ জেলায় অপাংক্তেয় করে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তৃণমূল অবশ্য তা মানতে রাজি নয়। এমনকী প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে থাকা একাধিক কর্মীর মধ্যে যে ক্ষোভ রয়েছে তা-ও দাবি করেছেন অনেকে। জেলায় তাদের ‘অস্ত্বিত্ব’ প্রমাণ করতে জেলা নেতাদের অনেকেই বলছেন, “কান্দি, মুর্শিদাবাদ, বেলডাঙায় কাকে ছেড়ে কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সময় ব্যয় করত হয়েছে।”
মান্নানের কথাতেও সেই সুর, “ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতেই পারে। কারণ সকলকে খুশি করা যায় না।” তবে প্রার্থী তালিকা এর চেয়ে ভাল হতে পারত না বলেও মনে করছেন না তিনি। এ দিন, বহরমপুরের মধুপুরে জেলা কার্যালয়ে দলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন ওই ৬টি পুরসভার ১০৭ জন প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেন। ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা ৪০ জন, শতকরা হিসেবে যা ৩৭ শতাংশ। মুখ্যমন্ত্রী নিজে মহিলা হওয়া সত্ত্বেও মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা এত কম কেন? মান্নান অবশ্য বলছেন, “দলনেত্রীর নির্দেশেই মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।”
মুর্শিদাবাদের যে ছ’টি পুরসভায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে তার দু’টি সিপিএমের দখলে। মান্নান বলেন, “পুরভোটের প্রচারে স্থানীয় সমস্যা এবং রাজ্য সরকারের উন্নয়নকে তুলে ধরা হবে।” বিশেষ করে কংগ্রেস এবং সিপিএমের দখলে থাকা পুরসভার দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের কথা সাধারণ নাগরিকদের কাছে প্রচারই হবে তৃণমূলের হাতিয়ার বলে দাবি প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ মান্নানের।
ঘোষিত পুরসভাগুলির মধ্যে মুর্শিদাবাদে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে মেহেদি আলম মির্জাকে। বারো বছর আগে, ২০০৩ সালের পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন মেহেদি। পরে তিনি তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। ২০০৫-২০১০ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের পুরপ্রধান ছিলেন তিনি। গত বছর ফের তৃণূলে ফিরেছেন তিনি। প্রসঙ্গত, ২০০৮’র লোকসভা নির্বাচনে মোমবাতি প্রতীক নিয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে তিনি মান্নানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে দল পুরসভার চাবি পেলে তাঁকে পুর প্রধান করা হতে পারে বলেও মেহেদি অনুগামীদের অনুমান। গত তিন মাস ধরে কংগ্রেস পরিচালিত ওই পুরসভায় কর্মীদের বেতন অনিয়মিত। এই অবস্থায় শাসক দল পুরসভা দখলের স্বপ্ন দেখলেও মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস এমনকী ফরওয়ার্ড ব্লকও বড় শক্তি বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরই একাংশ।
বেলডাঙা পুরসভা এ বার বেশ কয়েকটি নতুন মুখ রয়েছে। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার ক্ষেত্রেও নব্য প্রাথী দিয়ে ‘মন’ পেতে চাইছে দল। কান্দি এবং জঙ্গিপুরেও একই পথে হেঁটছে শাসক দল। তবে নব্য মুখে কি ‘চিঁড়ে ভিজবে’? ফল বেরোলেই তা স্পষ্ট হবে।